উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তৃতীয় দফায় বৃদ্ধি পাচ্ছে যমুনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পানি বৃদ্ধির সাথে শুরু হয়েছে নদ-নদীগুলোর ভাঙন। ভাঙনের সাথে সাথে নিঃস্ব হচ্ছে নদীর পাড়ের মানুষ। বৃহস্পতিবার থেকে উপজেলার বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়ায় যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। আজ একইভাবে ভাঙন বিদ্যমান রয়েছে। বিগত দিনে অল্প ভাঙন হলেও এবার তীব্র স্রোতে বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনেই যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে দশটি পরিবারের বসতভিটা। এ ছাড়াও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরো শতাধিক পরিবার। অনেকের শেষ সম্বল এই ভিটা। এই ভিটা হারিয়ে অসহারের মতো পথেই ঠায় হচ্ছে তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২১ সালের শুরুতে বড়খাল গ্রামে ভাঙনকবলিত যমুনার বাম তীরে ১০০ মিটার বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে। বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে তার ভাটিতে আরো ১৫০ মিটার বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। সে ডাম্পিং তীব্র স্রোতে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং পূর্বের ন্যায় আবারো ওই স্থানে ভাঙন শুরু হয়।
তৃতীয় দফায় হঠাৎ করে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে ভাঙন চাপে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়ায়। বৃহস্পতিবার একদিনেই অন্তত ১০টি পরিবারের বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যায় যমুনার গর্ভে। ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে এখন উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বড়খাল উচ্চবিদ্যালয় ও হলকারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং শত শত পরিবারের বসতভিটা।
একটি সূত্র জানায়, বড়খাল উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয় দুটি থেকে যমুনার ভাঙনরত পাড় মাত্র ত্রিশ মিটার দূরে। কর্তৃপক্ষের দাবি, দ্রত ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়া হলে এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে প্রতিষ্ঠান দুটিসহ শত শত পরিবারের বসতভিটা।
ভাঙনের শিকার হোসেন আলী খুত্তু বলেন, এক সময় আবাদি জমি বসতভিটা সবই ছিল। সর্বনাশা যমুনার গর্ভে তা বিলীন হয়ে গেছে। শেষবারে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিল সে স্থানটিও যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেল। এখন পরিবার নিয়ে মাথাগুঁজার ঠাঁই নেই। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছি।
বড়খাল গ্রামের তোতা মিয়া জানান, দীর্ঘদিন থেকে এ এলাকা যমুনার ভাঙনে জর্জরিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করে। সে চেষ্টাও বিফলে গেল এ বছর। যমুনায় তীব্র স্রোতের তোড়ে ভেঙে নেয় জিও ব্যাগের ডাম্পিং। ভাঙন রোধে স্থায়ী পদ্ধতি প্রয়োগের দাবি জানান তিনি।
মাঝিপাড়া গ্রামের বাদল চন্দ্র দাস বলেন, যমুনার গর্ভে এ অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমি ও শত শত মানুষের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। যমুনা যেভাবে ভাঙছে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়াসহ চরডাকাতিয়া ও খোলাবাড়ী যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের দিনরাত কাটছে এখন ভাঙন আতঙ্কে।
বড়খাল গ্রামের আলী হায়তার বাবুল ও শফিকুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডর জিও ব্যাগের ডাম্পিং যমুনার স্রোতের কাছে তুচ্ছ। দেওয়ানগঞ্জের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বড়খাল, মাঝিপাড়া ও বওলাতলী খানপাড়া গ্রামকে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে দেওয়ানগঞ্জের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাড়ী বড়খাল গ্রাম।
চিকাজানী ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম আক্কাস বলেন, জিও ব্যাগের ডাম্পিংয়ের পরিবর্তে ইটের ব্যারেক করে ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এ নদীর ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে না।
যমুনার ভাঙনকবলিত বড়খাল, মাঝিপাড়া, বওলাতলী খানপাড়াসহ চরডাকাতিয়া হয়ে খোলাবাড়ি পর্যন্ত ভাঙনরোধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা পাউবোকে জানানো হয়েছে। জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, যমুনার ওই স্থানে ভাঙন রোধের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমীক্ষা চলমান রয়েছে। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/মি