দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ চার খাতে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা। এ লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বকে আরো গতিশীল করতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে বৈঠকও করেছে।
সম্প্রতি রাজধানীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সফররত ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের গোলটেবিল বৈঠকে এ দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা জানান প্রতিনিধি দলটি। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পাশাপাশি আকাশ পরিবহন, ডিজিটাল অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করতে চান যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগের আরেকটি বড় পরিসর হলো স্বাস্থ্য খাত, তাতেও মার্কিন কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে সুসংবাদ।
বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষস্থানে রয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২তম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি ধীরে ধীরে কমে আসছে।
স্মরণযোগ্য, বড় বড় উন্নত দেশ সফরের সময় প্রতিবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে চমৎকার বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা বলে আসছেন। তিনি সুস্পষ্টভাবেই বেশ কয়েকদফা বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে সবচেয়ে উদার বিদেশি বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে।’ এটা পরিষ্কার যে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়ে গেছে, যা কাজে লাগাতে সক্রিয়তা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রই শুধু নয়, যুক্তরাজ্যসহ কমনওয়েলথের অনেক দেশ বাংলাদেশকে বিনিয়োগের ভালো গন্তব্য হিসেবে মনে করে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলাই মাসের শেষদিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বাংলাদেশের যে সার্বিক পরিবেশ তাতে আমেরিকা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহী। ফলে কী ধরনের বিনিয়োগ তারা করতে পারেন সে বিষয়েই বৈঠক হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, মোংলা বন্দর ও পায়রা বন্দরে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল বলেও সে সময় জানান নৌপ্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী শেভরনের মতো সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মার্কিন নতুন বিনিয়োগকারীরা একদিকে যেমন বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী, তেমনি তাদের বাণিজ্যবান্ধব সম্পর্কিত কিছু চাহিদাও রয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। বিনিয়োগ ও বাণিজ্য করতে গেলে সার্বিক বিষয়ে ইতিবাচক হওয়াই প্রত্যাশিত। তাই দেশটির উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে কর অবকাশ সুবিধা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস কার্যকর এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন এবং বিধিমালাগুলো আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
বিনিয়োগকারীদের এসব দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বেশকিছু কার্যকর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে তাদের আশ্বস্ত করা হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে।
এ ছাড়া বন্দর, রাস্তাঘাট ও বড় বড় সেতু নির্মাণের কারণে দ্রুত অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে চীন, জাপান, ভারত, কোরিয়া ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর উদ্যোক্তারা এ দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছেন।
ভোরের আকাশ/নি