ইমরান খান: অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছেন পেট্রলপাম্প মালিকদের একাংশ। রোববার থেকে এ ধর্মঘট শুরু করেছেন তারা। আর এ কারণে তেলশূন্য হয়ে পড়েছে রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রলপাম্প। ভোগান্তিতে পড়েছেন মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। এ সুযোগে বাড়তি দামে খোলা তেল বিক্রি করছেন খুচরা তেল বিক্রেতারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুর ১৪ নম্বর পেট্রল পাম্প ‘দিগন্ত ফিলিং স্টেশন’-এ পেট্রল বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু পেট্রল ও অক্টেনের মেশিন বন্ধ। বিষয়টি জানতে চাইলে এ পেট্রলপাম্পে কর্মরত মাহফুজ নামের এক যুবক বলেন, তেলের সরবরাহ বন্ধ। অক্টেন আমাদের রিজার্ভে নেই। এজন্যই মেশিনগুলো বন্ধ রয়েছে। শুধু পেট্রল বিক্রি করা হচ্ছে। শেওড়াপাড়ার সোহরাব সার্ভিস লিমিটেড নামে পেট্রলপাম্পে অক্টেন বিক্রি করা হচ্ছিল। তবে শুধু একটি মেশিন দিয়েই অকটেন বিক্রি করা হচ্ছিল। সেই পাম্পে অকটেন নিতে মোটরসাইকেল চালকদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
এ পাম্পে মোটরসাইকেলে অকটেন নিতে আসা শাকিল নামে এক ব্যাক্তি বলেন, সকাল থেকে বাড্ডা, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ একটি পেট্রলপাম্পে অক্টেন পেয়েছি। লম্বা লাইন থাকলেও কিছু করার নেই। তেল নিতেই হবে। এজন্য অপেক্ষা করছি। ওই পাম্পের ক্যাশিয়ার রনি বলেন, তেল সরবরাহ বন্ধ। আমাদের রিজার্ভে তেল কম। এজন্য একটি মেশিন দিয়ে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে রোববার সকালে তেজগাঁও রোডে ‘ট্রাস্ট ফিলিং স্টেশন’-এ তেল সরবরাহের কার্যক্রম স্বাভাবিক দেখা গেছে। কিন্তু সেখানে মোটরসাইকেল ও পিকাপের লম্বা লাইন দেখা গেছে।
সেখানে তেল নিতে আসা রনি হাসান বলেন, ঢাকার সব পেট্রলপাম্পই খোলা। সকাল থেকে তিনটি পাম্পে তেল নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার সিরিয়াল আসতে আসতে তেল শেষ হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত শুনলাম ট্রাস্ট নাকি তেল দিচ্ছে। এজন্য এখানে চলে আসলাম। কিন্তু এখানেও লম্বা লাইনের পেছনে পড়েছি। রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের ১১ নম্বর রোডে সড়কের ওপর খোলা তেল বিক্রি করেন ইসমাত নামের এক নারী।
রোববার সকাল থেকে তেল নেয়ার জন্য তার দোকানে ভিড় করছেন মোটরসাইকেল চালকরা। তেলের সংকট হওয়ায় প্রতি লিটারে ১০ টাকা করে বাড়তি নিচ্ছেন তিনি। বিষয়টি জানতে চাইলে তেল বিক্রেতা ইসমত জানান, কোথাও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আমি তো গরিব মানুষ। একসঙ্গে বেশি তেল আনা আমার পক্ষে সম্ভব না। অনেক দূর থেকে বাড়তি দামে তেল কিনে এনেছি। এজন্য ১০ টাকা করে বেশি নিচ্ছি।
সরকার অনুমোদিত পরিবেশকদের নিয়মিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীন থাকা তিন রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এ জ্বালানি তেল কিনে নিয়ে পরিবেশকরা নিজস্ব পেট্রলপাম্প থেকে ডিজেল, পেট্রল ও অকটেন বিক্রি করে গ্রাহকের কাছে। পেট্রলপাম্প মালিকদের দাবি, ডিজেলের ২ ভাগ, পেট্রলের ৩ ভাগ এবং অকটেনের ৪ ভাগ কমিশন বাড়িয়ে সাড়ে ৭ ভাগ করতে হবে। একইসঙ্গে তাদের শিল্প থেকে বাদ দিয়ে কমিশন এজেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।
এছাড়া পুরোনো ট্যাঙ্কলরি অবসরের সময় ২৫ বছর থেকে বাড়াতে হবে। এর মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের কমিশন এজেন্ট হিসেবে গেজেট প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাকি দুই দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন। ডিপো থেকে তেল উত্তোলন এবং পরিবহন বন্ধ রেখেছেন তারা। এতে অনেক পাম্পে সকাল থেকে বিক্রি হলেও দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তেল শেষ হয়ে যায়। ফলে বন্ধ আছে তেল বিক্রি। আজ সোমবার পর্যন্ত এ ধর্মঘট চললে পাম্প সবই বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আরেকাংশের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, সংগঠন থেকে বহিষ্কৃতরা এ ধর্মঘট ডেকেছে। এজন্য ঢাকার পাম্পগুলোয় তেলের সংকট হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকার পেট্রল পাম্পগুলোর ডিপো নারায়ণগঞ্জে। সেখানে প্রায় ৪০০ বেশি তেলের গাড়ি পে-অর্ডার নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু তাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে ঢাকার পাম্পগুলোয় তেলের সংকট হয়েছে।
এদিকে সোমবার সকালের আগে নারায়ণগঞ্জ ডিপো থেকে তেল পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া। তিনি বলেন, হয়তো সোমবার সকালের আগে নারায়ণগঞ্জ ডিপো থেকে তেল উত্তোলন সম্ভব হবে না। সারা দেশে পেট্রল পাম্পগুলো খোলা আছে। পেট্রল পাম্পগুলোয় তেলও রয়েছে। কোনো কোনো ডিপোতে সাপ্লাই লাইনের তেল উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এতে করে একটু তেল সংকট হতে পারে।
আমরা একটু আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। যারা তেল উত্তোলনের সিরিয়ালে আছেন তারা যেন উত্তোলন করতে পারে, সে বিষয়ে যেন পদক্ষেপ নেন তা বলা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি