logo
আপডেট : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১০:০০
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
ওপরে সচল নিচে অচল
রুদ্র মিজান

ওপরে সচল নিচে অচল

রুদ্র মিজান: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এটি উদ্বোধনের মাধ্যমে উন্মোচিত হলো এক স্বপ্নের দ্বার। মাত্র ১০-১২ মিনিটেই ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর এ যেন স্বপ্নের মতো। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিচে নামতেই যত বিপত্তি। ওপরে যান চলাচল সচল থাকলেও নিচে অচল অবস্থা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর থেকে যানজট বেড়েছে অসহনীয়ভাবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ওঠানামার স্থলে এ অবস্থা ভয়াবহ। এমনকি এর প্রভাব পড়েছে শহরজুড়ে। এমনটিই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শহরের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করতে গেলে মোড়ে মোড়ে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, তা করা হয়নি। অপরিকল্পিতভাবেই তৈরি করা হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

 

মঙ্গলবার দুপুরে দেখা গেছে, মহাখালী থেমে বিমানবন্দরে তীব্র যানজট। কনটেন্ট ক্রিয়েটর ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি মোটরসাইকেলে চলাফেরা করেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়েই মোটরসাইকেলযোগে বনানী থেকে ফার্মগেটে যান। সাধারণত মোটরসাইকেলে তুলনামূলক দ্রুত আসা-যাওয়া করা গেলেও গতকাল লেগেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। ইসমাইল হোসেনের ভাষায়, বাইকে এত সময় লাগবে, তা ভাবতেও পারিনি।

 

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ফার্মগেটের তেজগাঁও কলেজের সামনে নেমে মানিক মিয়া এভিনিউ-খামারবাড়ি হয়ে বেশিরভাগ গাড়ি ছুটে চলে কারওয়ানবাজারের দিকে। যে কারণে দিনব্যাপী ওই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। ওই সড়েক নিয়মিত যাতায়াত করেন মিরপুরে বাসিন্দা আসিফ ইকবাল।

 

তিনি জানান, গত দুদিন ধরে কারওয়ানবাজার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ যানজটের প্রভাব পড়ছে বাংলামোটর, মগবাজার; এমনকি কাকরাইল পর্যন্ত। বলা যায়, পুরো শহরেই যানজট বেড়েছে। আগে যেখানে ২০ মিনিটে এসব মোড় পার হওয়া যেত এখন সেখানে আধা ঘণ্টা-চল্লিশ মিনিট ব্যয় হচ্ছে। কখনো কখনো ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে এসব মোড় পার হতে।

 

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা ও ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের তীব্র যানজট। বনানী কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ থেকে গাড়ি ওঠানামার কথা থাকলেও সেখানে এখনো নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যারা ব্যবহার করছেন তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘপথ যাচ্ছেন অল্প সময়ে।

 

এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার পথের জ্যামটাই তাদের কাছে অস্বস্তির। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে এক ঘণ্টা-দেড় ঘণ্টার পথ তারা পাড়ি দিচ্ছেন মাত্র ১০ মিনিটে। দিনভর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সাঁই সাঁই করে গাড়ি চলতে দেখা গেছে। এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো যানজট নেই। ফাঁকা অনেকটা। এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে উত্তরা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে কারওয়ানবাজার এসেছিলেন ব্যবসায়ী ওলিউর রহমান।

 

তিনি বলেন, এটা ভাবনার বাইরে ছিল যে এত অল্প সময়ে কারওয়ানবাজার আসতে পারব। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামার পর যে জ্যাম লাগে আশা করি তা থাকবে না। এ বিষয়ে সরকার নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাহলে এক্সপ্রেসওয়ের পুরো সুবিধা পাব আমরা। যানজটে সময় নষ্ট হবে না। রাস্তায় যানজটের কবলে পড়ে যে জ্বালানি নষ্ট হয়, তাও হবে না। এক্সপ্রেসওয়েতে যাতায়াতকারী প্রায় সব গাড়িই ব্যক্তিগত। কখনো কখনো পিকআপভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে। যদিও রাজধানীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ চলাচল করেন গণপরিবহনে।

 

বাস চালকরা জানান, মোড়ে মোড়ে যাত্রী ওঠানামা করতে হয় বলেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের সুযোগ নেই তাদের। এর মধ্যে যে পরিমাণ টোল আদায় করা হচ্ছে, তা দিতে ভাড়া বেড়ে যাবে। সবকিছু মিলিয়ে নিচের যানজটময় সড়ক দিয়েই যাচ্ছে গণপরিবহন।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার নির্ধারিত টোল অনুযায়ী, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) ও হালকা ট্রাকের (তিন টনের কম) জন্য ৮০ টাকা। মাঝারি ট্রাকের জন্য (ছয় চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা, ছয় চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৪০০ টাকা। সব ধরনের বাসের (১৬ সিট বা এর বেশি) জন্য দিতে হবে ১৬০ টাকা।

 

গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ২৬ হাজারের বেশি গাড়ি চলাচল করেছে। এসব গাড়ি থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এএইচএম সাখাওয়াত আখতার জানান, প্রতিদিনই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। সে হিসেবে বাড়ছে টোল আদায়ের পরিমাণও। সবচেয়ে বেশি গাড়ি উঠছে কুড়িল-বিমানবন্দর পথে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যেমন সুবিধা দিচ্ছে, তেমনি সৃষ্টি হচ্ছে অসুবিধাও।

 

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ এম সামছুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, শহরের ভেতরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কখনো যানজট কমাতে সহায়তা করে না। শহর থেকে বের হতে, অর্থনৈতিক লাইফলাইন চালু রাখতে ও শহরকে বাইপাস করতে এটি ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করেছি শহরের মধ্য দিয়ে। আমাদের দরকার ছিল বাইপাস সার্জারি, আমরা করেছি ওপেন হার্ট সার্জারি।

 

ফলে শহরে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। শহরের মধ্য দিয়েই যখন হয়েছে, তখন উচিত ছিল কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া, মোড়গুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সে ধরনের অনেক পরামর্শও ছিল, কিন্তু তা মেনে চলা হয়নি বলে জানান তিনি।

 

উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকালে এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন সকালে এক্সপ্রেসওয়েটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি