ভাদ্র মাস শেষের দিকে। ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। অক্টোবর পর্যন্ত থাকবে এ মৌসুম। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে আসছে বড় বড় সাইজের ইলিশ। একইসঙ্গে আড়তগুলোতে বেড়েছে ক্রেতার সংখ্যা। বাজার তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো ইলিশের দাম নির্ধারণ করছেন।
দুপুরে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সামনে রেলস্টেশনের পাশে দেখা গেল বহু গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। নারী-পুরুষ অনেকেই শুধু চাঁদপুরের ইলিশ নিজে দেখে পছন্দ করে কেনার জন্য এসেছেন। ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে ইলিশ কিনতে এসেছেন মো. সোহাগ। তিনি বলেন, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কিনেছি। দাম নিয়েছে প্রতি কেজি ৭৮০ টাকা। প্যাকিং খরচসহ ৮০০ টাকা পড়েছে প্রতি কেজি। তবে আগের চাইতে দাম বেশি।
একইসঙ্গে ইলিশ কিনতে আসা আবদুল মান্নান বলেন, ঢাকা থেকে শুনেছি চাঁদপুরে ইলিশের দাম কম। কিন্তু এখানে এসে দেখি ঢাকার চাইতে বেশি দাম। তারপরেও কিনেছি। খেয়ে বুঝতে পারব, চাঁদপুরের নাকি সাগরের ইলিশ।
লঞ্চে ঢাকা থেকে চাঁদপুর ইলিশ কিনতে এবং ঘুরতে এসেছেন বেশ কয়েক জন যুবক। এর মধ্যে শিহাব হায়দার রাকিব নামে একজন জানান, ইলিশ নিয়ে চাঁদপুর ব্র্যান্ডিং। ইলিশের কারণে চাঁদপুর দেশ ও বিদেশে পরিচিত। তাই ইলিশের আসল স্বাদ নেয়ার জন্য এসেছি। দাম ভালো হলে ইলিশ কেনা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মাছঘাটে প্রায় ৫০টিরও অধিক মৎস্য আড়ত আছে। এছাড়া ইলিশের ভরা মৌসুম হওয়ার কারণে খুচরা বিক্রেতা আছে আরো কমপক্ষে ৫০ জন। অনলাইনেও অনেকে ইলিশ বিক্রি করেন। তবে বেশ কয়েক জন খুচরা ইলিশ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে দামের বেশ তারতম্য পাওয়া গেছে। একই ইলিশ প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা কম-বেশি দরে বিক্রি করছেন। জেলা সদরের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকি অভিযান থাকলেও মাছঘাটে কোনো অভিযান নেই। এখানকার ব্যবসায়ীরাই তাদের মাছের দাম নির্ধারণ করেন।
মাছঘাটের পাইকারি ও খুচরা ইলিশ বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহে ইলিশের দাম কিছুটা কমছিল। ইলিশ আমদানিও কিছুটা কম হয়েছে। যার কারণে প্রতি মণ ইলিশ ৫-৭ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, গতকাল এক কেজি ওজনের ইলিশ ছিল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। আজকে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দুই কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক হাজি শবে বরাত বলেন, চাঁদপুরে সাগরের ইলিশ আসে না। হাতিয়া, রামগতি ও আলেকজেন্ডার থেকে ইলিশ আসে। সাইজ অনুসারে দাম কম বেশি হয়। প্রতিদিনই ইলিশের দাম ওঠানামা করে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নুর হোসেন জানান, দাম বেশি রাখার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত তদারকি অভিযান হয়নি। তবে শিগগিরই করা হবে।
চাঁদপুর সদরের জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম জানান, আগামী অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশের ভরা মৌসুম থাকবে। তবে তখন মা-ইলিশ রক্ষার জন্য নিষেধাজ্ঞাও আসবে। আর ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণ করার কাজ আমাদের না।
ভোরের আকাশ/নি