নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১৬ খালে ৩০ হাজার ১৮৩ মিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এসব খাল খনন করে গভীরতাও বৃদ্ধি করা হয়। তাই খালগুলো প্রকল্পগ্রহীতা সংস্থা সিডিএ’কে বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনী। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিডিএকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও দেবে সেনাবাহিনী। পরবর্তীতে সিডিএ খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) বুঝে নিতে প্রস্তাব দিবে। তবে প্রকল্পের মাঝপথে খাল বুঝে নিতে অনাগ্রহী চসিক।
সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ বলেন, কয়েকটি খালে অল্পপরিমাণ রেলিংয়ের কাজ বাকি আছে। সেটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। বুঝিয়ে দেয়ার সময় খালের ড্রইং-ডিজাইন ও ম্যাপসহ অনেক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস দিতে হয়। সেগুলো ঘুচানোর কাজ করছি। খুব বেশিদিন সময় লাগবে না। এরপর আমরা চিঠি দিয়ে দিব। পরবর্তীতে সিডিএ সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিবে।
এদিকে প্রকল্পের মাঝপথে খাল বুঝে নিতে অনাগ্রহী চসিক। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পের পিসিআর না হওয়া পর্যন্ত খাল বুঝে নেয়ার সুযোগ নেই। গত মাসে অনুষ্ঠিত নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অনগ্রগতি পর্যালোচনা সভায়ও একই আপত্তি করে চসিক। ওই সভায় ১৬ খালের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আহব্বানেরও প্রস্তাব করা হয় চসিকের পক্ষ থেকে। তবে ওই সভা এখনো হয়নি।
এদিকে ভৌত কাজ শেষ হওয়া খালগুলোর মধ্যে গুপ্তাখালে ৩ হাজার ৮৭০ মিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি খালগুলোর মধ্যে রুবি সিমেন্ট খালে ৮০৬ দশমিক ৩০ মিটার, নয়ারহাট খালে ৮২৭ দশমিক ৮০ মিটার, ফিরিঙ্গি বাজার খালে ১ হাজার ৮২৬ মিটার, টেকপাড়া খালে ১ হাজার ৬৯৪ মিটার, সদরঘাট ১ খালে ৬২৯ মিটার, সদরঘাট ২ খালে ৬২১ মিটার, মোগলটুলী খালে ৬১৪ মিটার, উত্তরা খালে ২ হাজার ৪৮০ মিটার, রাজাখালী খাল ২ খালে ২ হাজার ৭৯৩ মিটার, রাজাখালী খাল ৩ খালে ২ হাজার ৬০০ মিটার, মরিয়ম বিবি খালে ১ হাজার ৭০৮ মিটার, কলাবাগিচা খালে ৬২৯ মিটার, রামপুর খালে ১ হাজার ৪৭৭ মিটার, আজববাহার খালে ১ হাজার ৩৪৮ মিটার এবং ডোমখালী খালে ৬ হাজার ২৬০ মিটার দীর্ঘ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সিডিএ’র মেগা প্রকল্পটির আওতায় রয়েছে ৩৬ খাল। ১৬ খালের বাইরে আরো ৯ খালের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণসহ খনন কাজ আগামী জানুয়ারির মধ্যে শেষ করার টার্গেট আছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার।
উল্লেখ্য, প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২৮ এপ্রিল নগরীর চশমা খাল ছাড়াও মুরাদপুর এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন খাল ও বহদ্দারহাট মোড়ের বড় নালা পরিষ্কার করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল।
শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ সময়ে প্রকল্পের বিপরীতে মন্ত্রণালয় ছাড় করে ৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি