logo
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৫:৫১
বাণিজ্যিকভাবে গাড়ল পালনে লাভবান খামারিরা
রাজবাড়ী প্রতিনিধি

বাণিজ্যিকভাবে গাড়ল পালনে লাভবান খামারিরা

রাজবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে উন্নত জাতের গাড়ল পালন হচ্ছে

রাজবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে উন্নত জাতের গাড়ল পালন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে এ জেলার গাড়ল। গাড়ল পালন করে ভাগ্য বদলেছে জেলার অনেক প্রান্তিক খামারির। মাংসের ভালো চাহিদা ও বাজারে ভালো দাম পেয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। গাড়ল দেখতে হুবহু ভেড়ার মতোই।

 

এদের জীবনচক্রও একই রকমের। তবে ভেড়ার চেয়ে আকারে বেশ বড় ও মাংসের পরিমাণও কয়েকগুণ বেশি গাড়লের। ফলে জেলায় দিন দিন বাড়ছে গাড়লের খামার। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় গাড়ল পালনে আগ্রহী হচ্ছেন খামারিরা।

 

খামারিরা জানিয়েছেন, ভেড়াগোত্রীয় এই গাড়লের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে দেশজুড়ে। রাজবাড়ী জেলার খামারিদের কাছ থেকে গাড়লের বাচ্চা কিনে নিয়ে নতুন নতুন খামার গড়ে তুলছেন দেশের অনেক জেলার খামারিরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উদ্যোক্তারা খামার থেকেই বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আকারভেদে ৬ মাস বয়সের গাড়লের প্রতিটি বাচ্চা ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

গাড়ল পালনকারী খামারি মো. বছির বলেন, গাড়ল পালন করে এখন আমি স্বাবলম্বী। এটি লাভজনক ব্যবসা। খরচও খুব কম হয়। গাড়ল ভেড়ার চেয়ে আকারে বড় এবং লেজও অনেক বড়। গাড়ল সাধারণত কাঁচা ঘাস, গাছের পাতা, বিচুলি, ভুসি, খৈলসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে।

 

আরেক খামারি মো. আল-আমিন বলেন, গাড়ল সাধারণত প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে। এদের জন্য বাড়তি কোনো খাবারের দরকার হয় না। রোগবালাইও কম হয়। আমার দেখাদেখি অনেকেই এখন গাড়ল পালন শুরু করেছে। এ ছাড়াও রাজবাড়ী জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মানুষ খামার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন গাড়লের বাচ্চা। প্রতিটি ৬ মাসের দুধ ছেড়েছে এমন বাচ্চা ৪ থেকে ৬ হাজার এবং প্রাপ্তবয়স্ক ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

 

রাজবাড়ী জেলা সদরের বসন্তপুুর ইউনিয়নের গাবলা গ্রামের খামারি মো. ইসমাইল বলেন, আগে ছাগল পালন করতাম। পরে ইউটিউবে দেখেছি গাড়ল পালন অধিক লাভজনক। ২০২১ সালের শেষের দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৬০টি গাড়ল কিনে এনে ১ বিঘা জমির ওপর ঘর তৈরি করে গাড়ল পালন শুরু করি। এখন পর্যন্ত ৪০টি গাড়ল আমি বিক্রি করেছি।

 

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. খায়ের উদ্দীন আহমেদ বলেন, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি গাড়লের খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার গাড়লের বাচ্চা উৎপাদন হয়। গাড়ল সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। এদের রোগব্যাধি অনেক কম। এ জন্য গাড়ল পালন সহজ। পূর্ণ বয়স্ক গাড়লের ওজন ৫৫ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়। গাড়লের মাংস ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এর মাংস সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা বেশি।

 

তিনি আরও বলেন, প্রতি ৭ মাস পর পর গাড়ল বাচ্চা দেয়। প্রসবকালে ২টি পর্যন্ত বাচ্চা হয়। ৪ থেকে ৫ মাসের একটি গাড়লের বাচ্চার দাম ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। মাদি গাড়ল বিক্রি হয় প্রতিটি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায়। গর্ভবতী গাড়ল বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। পাঠা গাড়ল বিক্রি হয় প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়।

 

গাড়ল খামার করেই স্বাবলম্বী হতে পারেন উদ্যোক্তারা। লাভজনক হওয়ায় দিন দিন গাড়ল পালন বাড়ছে। আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খামারিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি