logo
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১১:০৬
পুকুর-জলাশয় ভরাটে জলাবদ্ধতা, চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা
শরীয়তপুর প্রতিনিধি

পুকুর-জলাশয় ভরাটে জলাবদ্ধতা, চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা

শরীয়তপুরের ধানুকা এলাকার মনসা মন্দিরের সামনে শতবর্ষী দিঘি ভরাট চলছে

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনের তোয়াক্কা না করে শরীয়তপুর পৌরসভায় একের পর এক পুকুর ও জলাশয় ভরাট করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক বছরে ভরাটের কারণে বিলুপ্ত হয়েছে পৌর এলাকার শতাধিক পুকুর ও জলাশয়। বালু ভরাট করে এসব স্থানে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। প্রশাসনের নাকের ডগায় জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

 

পরিবেশ ও জলাধার আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে ভরাট করা হচ্ছে এসব ঐতিহ্যবাহী দিঘিসহ নালা ও খাল। ক্রমাগত জলাশয় ভরাট হওয়ায় মৎস্য সম্পদের ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন নাগরিকরা। এ ছাড়া পৌর এলাকায় সেভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ধানুকা মনসা মন্দিরের সামনে শতবর্ষী বড় দিঘি বালু দিয়ে ভরাট চলছে, তার পাশেই মরন বেপারি দিঘি ভরাট করে প্লট করে বিক্রি হচ্ছে। পুলিশ সুপারের পুরোনো কার্যালয়ের পেছনে দুটি পুকুর ভরাট চলছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মোলথা বাড়ি পুকুর ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

 

জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে একটি পুরোনো পুকুর বাঁশের বাঁধ দিয়ে ভরাট করার প্রক্রিয়া চলছে। শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গেথারি তেলের পাম্প সংলগ্ন পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে গেথারি এলপিজি স্টেশন। শহরের পশ্চিম কোটাপারা মুন্সী বাড়ির সামনে ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট।

 

পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো এই পুকুরগুলো ভরাটের কারণে পৌরসভার অনেক স্থানে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। তারা বলেন, পুকুর ও জলাশয় ভরাটে জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের দাপটে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এমনকি কেউ প্রশাসনে অভিযোগ দিলে উল্টো প্রশাসনের লোকজন বালু ব্যবসায়ী বা জলাধার ভরাটকারীর কাছে তথ্যদাতার নাম প্রকাশ করে দেয়। এতে অভিযোগকারীরা হেনস্তার শিকার হন।

 

স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী শেখ জাবেদ জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে তার দেয়া তথ্য ফাঁস হওয়ায় গত ১৯ আগস্ট তিনি বালু ভরাটকারীদের হামলার শিকার হন। তাকে শহর ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেয় হামলাকারীরা।

 

পৌর তহশিলদার আব্দুর রহমান খান বলেন, পুকুর ও জলাশয় ভরাটের বিষয়ে তথ্য পেলে তারা তৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে গিয়ে ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। তবে পরে তাদের অগোচরে পুকুর ও জলাশয় ভরাট করা হয়। লোকবল কম থাকায় সবসময় তাদের নজরদারি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না বলে জানান তিনি।

 

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার জানান, কাগজে কলমে শরীয়তপুর সদর পৌরসভায় ৩২টি সরকারি পুকুরসহ ছোট-বড় মোট ৩২৬টি পুকুর রয়েছে। তবে বর্তমানে কতগুলো পুকুর ভরাট হয়েছে তার সঠিক হিসাব তাদের কাছে নেই।

 

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন ছাড়া কেউ অবৈধভাবে জলাশয় ভরাট করতে পারবে না। প্রশাসন কিছু জায়গায় জরিমানা করে পুকুর ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বালু ভরাটের সঙ্গে বড় একটি প্রভাবশালী গ্রুপ কাজ করছে। তাই এটা বন্ধ করাটা জটিল হয়ে পরছে। এভাবে চলতে থাকলে শহরের জলাবদ্ধতা আরও বেড়ে যাবে। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে শিগগির বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।

 

শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন বলেন, পৌরসভার মধ্যে খাল ও পুকুর ভরাটের খবর পেলে তিনি জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওর সঙ্গে সমন্বয় করে ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেন। এর পরও দুষ্কৃতকারীরা নানা কৌশলে জলাশয় ভরাট করেছে।

 

এতে শহরে জলাবদ্ধতা বেড়ে গেছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি পৌরসভার খালগুলো পুনর্খননের উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি