ময়মনসিংহের গৌরীপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভুয়া কাগজপত্রে আরো একটি দলিল সম্পাদনের সন্ধান মিলেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ভূমির প্রকৃত মালিক মো. আব্দুল কাদির ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হকের পুত্র।
তিনি জানান, বায়রাউড়া মৌজায় ৯৯নং খতিয়ানের বিআরএস ৫৪৫নং দাগে সাড়ে ২৬ শতাংশ ভূমি ১৯ জানুয়ারি ২০১২ সনে হেলাল উদ্দিনের পুত্র আবুল বাশারের কাছ থেকে ক্রয় করেন তিনি। এ খতিয়ান থেকে ২৭৬নং জমাখারিজ খুলিয়া খাজনাদি পরিশোধ করে আসছেন তিনি। একই বছরের ২২ মার্চ ৯৯নং খতিয়ানে ৫৪৪নং দাগ সংযোজন করে ভুয়া খতিয়ান তৈরি করিয়া (প্রকৃতপক্ষে ৯৯নং খতিয়ানে ৫৪৪ দাগ নেই) ও ভূমি উন্নয়ন করের ভুয়া রশিদ জমা দিয়ে ১১২৯নং দলিল তৈরি করা হয়েছে। এ দলিলের গ্রহিতা হলেন কোনাপাড়া গ্রামের উসমান গণির স্ত্রী আমেনা উসমান উজ্জলা পুর্না।
আব্দুল কাদির বলেন, ভুয়া কাগজপত্রে সম্পাদিত সেই দলিল দিয়ে আমার জমির ৫৪৫নং দাগটি মুছে দিয়ে ৫৪৪নং দাগে পরিণত করার জন্য গৌরীপুর ভ‚মি অফিসে আবেদন করেছেন উসমান গণির স্ত্রী আমেনা উসমান উজ্জলা পুর্না। ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা আমাকে নোটিশ না দিয়েই আমার জমির জমাখারিজ ভেঙে ৫৪৫নং দাগ মুছে দিয়ে সেখানে ৫৪৪নং দাগ সংশোধনের প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন। প্রস্তাব প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা এ কে এম বজলুর রহমান।
তিনি বলেন, নকশায় ৫৪৪নং দাগ রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ৫৪৫ (৫৪৪) দাগে ইতোমধ্যে যারা খারিজ নিয়েছেন তাদের কি হবে, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
এ প্রসঙ্গে উসমান গণি বলেন, আব্দুল কাদির যে অভিযোগ করেছে তা সঠিক না। আমি আমার স্ত্রীকে কাগজপত্র না দেখে জমি কিনে দেই নাই। আমার স্ত্রীর জমির সব কাগজপত্র সঠিক রয়েছে। দলিলের সঙ্গে তো আর খতিয়ানের কাগজপত্র দেয় না। তখন কি কাগজপত্র দিয়ে দলিল করছেন সেটা দলিল লেখক ভালো বলতে পারবেন। আমি কোনো কাগজপত্র জাল করিও নাই, জানিও না।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসার হেলেনা পারভীন বলেন, ২০১১ সাল থেকে জমি রেজিস্ট্রি দলিলের জন্য খতিয়ানের সঙ্গে ভূমি উন্নয়ন করের রশিদ প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেহেতু এই দলিলের ৯৯নং খতিয়ানে ৫৪৪নং দাগটি নেই। তাই ভুয়া খতিয়ান ও রশিদ ব্যবহার করে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দলিল গ্রহিতার জমির মালিকানাও বৈধ হবে না।
ময়মনসিংহ সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২৯নং জেএলের বায়ড়াউড়া মৌজায় ৫৪৩নং দাগের পরেই ৫৪৫ ও ৫৪৫ ক্রমিকের দুটি দাগ হয়েছে। এরমধ্যে ৫৪৪নং দাগ নেই। প্রথম ৫৪৫নং দাগটিতে ১ একর ৩৩ শতাংশ জমি ৯৯নং খতিয়ানভুক্ত। দ্বিতীয় ৫৪৫নং দাগটিতে ১০ শতাংশ জমি ২২৮নং খতিয়ানভুক্ত।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, চূড়ান্তভাবে প্রকাশের পূর্বে একাধিকবার খসড়া খতিয়ান ও দাগ সংশোধনের জন্য প্রচার ও আপত্তি থাকলে তা জানানোর জন্য সময় দেয়া হয়েছিল। চূড়ান্তভাবে প্রকাশের পর এখন সংশোধনের কোনো সুযোগ অফিসের নেই।
এ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফরোজা আফসানা বলেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে কাগজপত্র যাছাই করা হচ্ছে। সঠিক কাগজপত্র দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরদিকে ২৯নং জেএলের বায়ড়াউড়া মৌজার নকশায় দেখা যায় ৫৪৩, ৫৪৪ ও ৫৪৫নং দাগে ক্রমিকানুযায়ী রয়েছে। ৯৯ খতিয়ানের ৫৪৫নং দাগের স্থলে ভূমির নকশায় ৫৪৪নং দাগে ১ একর ৩৩ শতাংশ বিদ্যমান। ভূমি জরিপকারীদের এ ভুলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দু’দল গ্রামবাসী।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর সহকারী জজ আদালতের আইনজীবী এড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রেকর্ড সংশোধন করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ৫৪৪নং দাগের কোনো কার্যকারিতা নেই। এ দাগে জমি ক্রয়-বিক্রয়েরও কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়াও গৌরীপুর সাবরেজিস্টি অফিসে উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালী মৌজায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ২০২০ সনের ২৪ জানুয়ারি একটি দলিল হয়। এ নিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তদন্ত শেষে মামলা হয়।
গৌরীপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার হেলেনা পারভীন ও তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোসা: নিকহাত আরা পৃথক তদন্তে ভ‚মি অফিসের ২৭২৮ (আইএক্স-আই) ২০২১-২২ নং নামজারি ও জমা খারিজ মোকদ্দমা এম-৪৯/০২/১৭নং যে ডিসিআরের কপি, এক্স ৮৬৪৪৮১ নং ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ জাল প্রমাণিত হয়। এ ঘটনায় উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের মোহরার মনিন্দ্র চন্দ্র দাস বাদী হয়ে ১ নভেম্বর ২০২২ সনে মামলা দায়ের করেন।
ভোরের আকাশ/নি