অবকাঠামো, স্যাটেলাইটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে দুটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ঢাকা ও প্যারিস। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উপস্থিতিতে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ফ্রান্স সম্পর্ক আরো সুসংহত এবং জোরদারের পথ সুগম হলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সুবিধা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে ফ্রান্স বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিগত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে চলমান সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা উন্নয়ন এবং সুশাসন এ নতুন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিমূলক কর্মকান্ডের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে লক্ষ করা যাচ্ছে, ফ্রান্স ও বাংলাদেশ জলবায়ু অর্থায়নের ওপর বেশ জোর দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে, তার অন্যতম বাংলাদেশ। তাই আমাদের জন্য এ ধরনের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২০২১ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। প্রধানমন্ত্রী তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর গত দুই দিনের সফর এরই ধারাবাহিকতা। দুই দেশের মধ্যে অনেক দিন ধরে সুসম্পর্ক বজায় আছে।
সমঝোতা স্মারক দুটি হলো- ১. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ফ্রান্সের ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (এফডিএ) মধ্যে ‘ইম্প্রুভিং আরবান গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে একটি ক্রেডিট সুবিধা চুক্তি। ২. বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এসএএসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম সম্পর্কিত সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই)। দুই দেশের মধ্যে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক, তাতে নতুন নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টা চলছে।
যেমন- বাংলাদেশ ১০টি এয়ারবাস কিনতে সম্মত হওয়ার কথা জানিয়েছে। এটিকে ফ্রান্স স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশ তার প্রথম স্যাটেলাইট ফ্রান্স থেকেই নিয়েছিল। বাংলাদেশ যখন আবারো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে, তখন ফ্রান্স সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ-ফ্রান্স দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সে দিন ফ্রান্স সরকার সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
এরপর ঠিক পরের মাসেই ১৭ মার্চ প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপনের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা চুক্তিসহ (১৯৮৭) বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনেও ফ্রান্সের সহযোগিতা পেয়েছে বাংলাদেশ। সমস্যার শুরুর দিকেই ফ্রান্স জাতিসংঘে বেশ কটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিল।
দুই দেশের জন্যই সম্পর্ক আরো জোরদার করার সুযোগ রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ফ্রান্স বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতেই পারে। একই সঙ্গে ফ্রান্সের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা থেকে বাংলাদেশও উপকৃত হবে। দুই দেশের উচিত ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনায় সৌহার্দপূর্ণ এই সম্পর্ক সামনের দিনে আরো জোরদার করা।
ভোরের আকাশ/নি