logo
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৩:৪১
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন গড়ে প্রতি আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখের বেশি
শাহীন রহমান

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন
গড়ে প্রতি আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখের বেশি

নির্বাচন সামানে রেখে এবার আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, কেন্দ্রভিক্তিক এবারের তালিকায় গড়ে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখের বেশি। যদিও কোনো কোনো আসনের এই সংখ্যা কম-বেশি রয়েছে। তারা জানান, আগামী ২ নভেম্বর কেন্দ্রেভিক্তিক চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ তরা হবে। তারা জানান, এই নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটার হওয়ার জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দেয়া হয়েছিল। এই সময়সীমার মধ্যে যারা ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন তাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে ইসির বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে যারা ভোটার হতে পারেননি তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশের পর আসনভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডি প্রকাশ করা হবে নভেম্বরের ২ তারিখে। এ সিডি প্রকাশ করে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে। সূত্র জানায়, ইসি আসনভিক্তিক ভোটার তালিকার যে সিডি প্রকাশ করতে যাচ্ছে সেখানে সিটি কর্পোরেশন এলাকার আসনগুলোতে ভোটার সংখ্যা বেশি থাকছে। অন্যদিকে গ্রাম অঞ্চলের আসনগুলোতে ভোটার কম থাকবে। সংসদীয় আসনের সীমানা ও জনসংখ্যার তারতম্যের কারণে আসনগুলোতে বড় ধরনের ভোটার সংখ্যায় তারতম্য আসছে। তবে কম-বেশ হলে গড়ে প্রতি আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখের বেশি বলে তারা জানান। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠ পর্যায়ে জেলা, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিস থেকে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজারের বেশি। তবে ভোট কেন্দ্রে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হলেও আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে ইসি।

 

আগামী নভেম্বরের প্রথমার্ধে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা কবে হবে তা আগেই জানিয়েছে ইসি। ইসির পক্ষ থেকে নিবাচন প্রস্তুতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে ভোট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। আগামী ৩০ নভেম্বর চলবে এই কর্মসূচি। নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে ইসি। ৩০০ আসসে ব্যালট পেপারে ভোট নেয়া হবে। ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, মাঠ কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া যারা ভোটার এলাকা পরিবর্তন করবেন, তাদেরও আবেদন করার সুযোগ দিয়েছিল সংস্থাটি। এক্ষেত্রে ১৪ সেপ্টেম্বর এই সময়সীমা শেষ হয়েছে। এরপরে যারা ভোটার হবে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে না। ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরীর পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যারা ভোটার তালিকায় অন্তভূর্ক্তির জন্য নিবন্ধন করেছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে উপজেলা বা থানাভিত্তিক ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই করার জন্য পাঠানো হবে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। এরপর উপজেলা বা থানাভিত্তিক ছবিসহ ও ছবি ছাড়া ভোটার তালিকা নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হবে আগামী ২৮ অক্টোবর। সবশেষে ৩০০ নির্বাচনী এলাকার জন্য হালনাগাদ ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করা হবে ২ নভেম্বর।

 

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রার্থীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পরিশোধ করে আসনভিত্তিক ওই সিডি নেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এই সিডির ভিত্তিতেই প্রার্থীরা জানতে পারেন কারা তাদের ভোটার। গত ১৬ আগস্ট ভোটকেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। সেই তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি জানাতে সময় দেয়া হয় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। দাবি-আপত্তি শুনানি শেষে তা নিষ্পত্তির শেষ সময় ১৭ সেপ্টেম্বর। আর ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। সর্বশেষ ২০২২ সালের হালনাগাদ অনুযায়ী দেশে ভোটা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪ জন। আর নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন। এ ছাড়া হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৩৭ জন। তরুণ ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করায় এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

 

খসড়া তালিকা অনুযায়ী, এবার ৪২ হাজারের বেশি। আর ভোটকক্ষ ২ লাখ ৬১ হাজার ৫০০টি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪২ লাখ। সে সময় সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০ হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৪০ হাজার ১৯৯টি কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিলের পর আগামী ডিসেম্বরের শেষ অথবা জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণ করা হবে। সে অনুযায়ী ইসিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

 

গত বছর জুলাই মাসে প্রকাশিত ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরে ডিসেম্বরে অথবা পরের বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী ইসিতে ধারাবাহিক প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট দেয়া হয়েছে। ব্যালট পেপারে ভোটের জন্য কাগজ কেনাও সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য সরঞ্জাম কেনাকাটা শুরু হয়েছে। তবে তফসিল ঘোষণার পরই ব্যালট ছাপানো হবে বলে জানান ইসির কর্মকর্তারা। তারা বলেন, প্রতি আসনের যত প্রার্থী থাকবে ব্যালটে তাদের নাম থাকবে প্রতীকের পাশে। এ কারণে তফসিল অনুযায়ী প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরেই ব্যালট পেপার ছাপানোর কাজে হাত দেয়া হবে।

 

অপরদিকে সারা দেশে ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হলেও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরে। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী এবার আড়াই হাজার ভোটারের জন্য এটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ভোটার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে গতবারের চেয়ে এবার কেন্দ্র বেড়েছে ২ হারের বেশি। গড়ে ৬০০ জন পুরুষ ভোটারের জন্য এবং ৫০০ জন মহিলা ভোটারের জন্য ১টি করে কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র স্থাপনে সরকারি ভবনসমূহকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা পরিচালিত কমিউনিটি সেন্টার, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, সরকারি অফিস, ক্লাব এ ধরনের ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। দুটি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের মধ্যে রাখা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি