আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার এ দাম নির্ধারণ হলেও শনিবারে তা বাজারে কার্যকর হয়নি। যদিও দাম ওইদিন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্তে উষ্মা প্রকাশ করেছন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও পাইকারি বাজারে পণ্যগুলো কত দামে বিক্রি হবে তা নির্ধারণ হয়নি। ফলে পাইকারিতে দাম কমেনি। বেশি দামে পণ্য কেনা থাকায় খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না।
গতকাল কারওয়ান বাজার, বড় মগবাজার এবং রামপুরা এলাকার কয়েকটি বাজার ও পাড়া-মহল্লার দোকান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য তিনটি বিক্রি হচ্ছে না। গতকাল শুক্রবারও একই চিত্র দেখা গেছে বাজারে। যদিও শুক্রবার বিকেল থেকে সরকার নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে সারা দেশে অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দাম বেশি নেয়ায় ৯০টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ৪১টি টিম দিয়ে ৫৩টি বাজারে অভিযান চালানো হয়। এতে জরিমানা করা হয় মোট দুই লাখ ৩৭ হাজার টাকা। তারপরও সরকারের এ সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে তিনটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং সঙ্গে স্যালাইনের দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালাবে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে ঢাকা মহানগরীতে অভিযান চালাবে তিনটি টিম।
অন্যদিকে গতকাল সকালে কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে আগের চিত্র। সকাল থেকে পেঁয়াজ, ডিম ও আলু আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। ফলে তাদের পক্ষে এখনই সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম কেজিতে ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা হওয়ার কথা। তবে বাজারে প্রতি হালি ডিম আগের মতো ৫০-৫২ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি সাড়ে ১২-১৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আলু ৫০-৫৫ টাকাই রয়ে গেছে। কমেনি পেঁয়াজের দামও। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫-৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছেন না কেন— এমন প্রশ্নে ইয়াকুব আলী নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারি বাজারে গত দুদিনে দাম এক টাকাও কমেনি। ১০০ ডিমের দাম দোকানে এনে খরচ হয় এক হাজার ২২০ টাকার বেশি। তার মানে একেকটা ডিমের দাম ১২ টাকা ২০ পয়সা। তাহলে কীভাবে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করবো? আমরা গরিব মানুষ। লোকসান দিয়ে বিক্রি করলে সংসার কি সরকার চালাবে?
তিনি বলেন, আড়তে না গিয়ে খুচরায় অভিযান ও চাপ প্রয়োগ হচ্ছে। আড়তে দাম বেশি থাকার পরও যদি আমাদের কম দামে পণ্য বিক্রিতে বাধ্য করে, তাহলে দোকান বন্ধ ছাড়া উপায় থাকবে না। কমে কিনতে না পারলে বেচবো কেমনে। শুধু ইয়াকুব আলী নয়, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে পণ্য বিক্রি করছেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অন্য বিক্রেতাদের অজুহাতের শেষ নেই। কয়েকজন বিক্রেতা আবার বলছেন, তারা না কি বেঁধে দেয়া দামের বিষয়টি জানেনই না। তবে অনেকে বলছেন, বেঁধে দেয়া দাম কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে। আগে কমাতে হবে পাইকারিতে। রামপুরা নতুন রাস্তা এলাকায় মুদি পণ্য বিক্রেতা শফিউল্লাহ বলেন, সরকারের হিসাব আমাদের জানা নেই। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি, কমে কিনলে কমে বেচি। মগবাজার বাজারের খালেক স্টোরের মালিক খালেক হোসেন বলেন, আমরা কি দামে কিনেছি তার ক্যাশ মেমো আছে। সেই দামের হিসাবে পণ্য বিক্রি করছি। হুট করে বললেই কমানো যায় না।
ভোরের আকাশ/মি