মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: এক সময় শ্রীলঙ্কার সুদিন ছিল। দলে ছিল সব বাঘাবাঘা ক্রিকেটার। রানাতুঙ্গা, ডিসিলভা, জয় সুরিয়া, সাঙ্গাকারা, চামিন্ডা ভাস, মুরালিধরন, জয়াবর্ধণেদের মতো ক্রিকেটার ছিল তাদের। যে কোন দলের জন্যই ব্যাটে বলে ভয়ঙ্কর ছিল তারা। একদিনের ক্রিকেটে বিপক্ষদলকে সর্বনিম্ন রানে আটকানোর ৬ রেকর্ডের তিনটিই ছিল তাদের দখলে।
জিম্বাবুয়েকে তারা একবার ৩৫ রানে আর একবার ৩৮ রানে বেধে দেন। কানাড়াকে একবার ৩৬ রানে আটকে দেন। এখন তাদের দিন ফুরিয়েছে। প্রায় নাকানি-চুবানি খেতে দেখা যায় তাদের। এশিয়াকাপে আবারও সেই চিত্র দেখা গেল। ফাইনালে ভারতের কাছে মাত্র ৫০ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। জবাবে মাত্র ৬.১ ওভারে জয় পায় ভারত। ১৫.২ ওভারে মাত্র ৫০ রানে অলআউট হলে ভারতের সামনে জয়ের লক্ষ্য মাত্রা দাঁড়ায় ৫১ রান। সেই রান তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা ও শুভমান গিলের ব্যাটে ভর করে ৬.১ ওভারে বিনা উইকেটে জয় তুলে নেয় ভারত। গিল ১৯ বলে ৬ চারে ২৭ রানে ও রোহিত ১৮ বলে ৩ চারে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত শুরু পায় ভারত। শুবমান গিল ও ঈশান কিষাণের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৩৭ বল খেলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। ঈশান অপরাজিত ছিলেন ১৮ বলে ২৩ রান করে। আর গিল ২৭ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুর ওভারেই ধাক্কা খায় লঙ্কানরা। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লঙ্কান ওপেনার কুশল পেরেরা। রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। এরপর শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামান ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে পাথুম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে শুরু করেন সিরাজ। জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচে এই ওপেনার আটকা পড়েছেন ২ রান করে। দ্বিতীয় বল ডট হয়েছে। তবে এর পরের বলে সাদেরা সামাবিক্রমাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেছেন সিরাজ। এই ইনফর্ম ব্যাটার রিভিউ নিয়েছিলেন তবে শেষ রক্ষা হয়নি। চতুর্থ বলে আবারও উইকেট। এবার তার শিকারে পরিণত হয়েছেন চারিথ আসালঙ্কা।
প্রথম চার বলে ৩ উইকেট নেয়ার পর পঞ্চম বলটি ছিল হ্যাটট্রিক ডেলিভারি। সেটিতে দারুণ এক শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করেন ধানাঞ্জয়া ডি সিলভা। কিন্তু পরের বলেই তিনি উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। ফলে এক ওভারেই ৪ উইকেট পেয়েছেন সিরাজ।
নিজের তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে আবারও উইকেট পেয়েছেন। চতুর্থ বলে বোল্ড করেছেন দাসুন শানাকাকে। ফলে নিজের করা ১৬ বলে মধ্যেই ৫ উইকেট পেয়েছেন তিনি। বল বাই বল ডেটা যখন থেকে রাখা হচ্ছে, তাতে চামিন্দা ভাসের রেকর্ড ছুঁলেন সিরাজ। ভাস ১৬তম বলে পঞ্চম উইকেটটি নিয়েছিলেন ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেবার ভালোবাসা দিবসের ম্যাচে প্রথম ওভারেই বাংলাদেশের ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ভাস। ফাইফার নিয়েই থেমে থাকেননি সিরাজ।
এরপর ইনিংসের ১২তম ওভারে এসে কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে ৭ ওভারে ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। সিরাজের আগুন ঝড়ানোর দিনে জ্বলে ওঠেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়াও। তার ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। তাছাড়া জাসপ্রিত বুমরাহ পেয়েছেন এক উইকেট।
এদিকে এমন লজ্জার দিনে বাংলাদেশকেও যেন কিছুটা রেহাই দিল লঙ্কানরা। আজকের ফাইনালের আগ পর্যন্ত এশিয়া কাপে দলীয় সর্বনিম্ন স্কোর ছিল বাংলাদেশের। ২০০০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সে রেকর্ড ভাঙল শ্রীলঙ্কা।
এশিয়া কাপের ফাইনালের ক্ষেত্রে অবশ্য আগের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১৭৩ রানের। শ্রীলঙ্কা থামল তার অনেক আগেই। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর। আবার ভারতের বিপক্ষে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ডও এটি। লো স্কোরিং এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়েছে ৫০ রানে। ভারত ম্যাচ জিতেসে অনায়াসে। ১০ উইকেটের ব্যবধানে জয় পেয়েছে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন দলটি। এশিয়া কাপের ফাইনালে উইকেটের হিসেবেও এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।
সর্বনিম্ন রানের আরও যত কীর্তি: পাকিস্তান: ৪৩ রান : ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ম্যাচে পাকিস্তানি দল ২০ ওভারের আগেই মাত্র ৪৩ রানে গুটিয়ে যায়, যা একটি লজ্জার রেকর্ড। প্রসঙ্গত, এর আগের বছরেই তারা বিশ্বকাপ জয়ের শিরোপা পেয়েছিল।
শ্রীলঙ্কা: ৪৩ রান : এই লজ্জার তালিকায় রয়েছে আরও এক বিশ্বকাপ জয়ী দল শ্রীলঙ্কা। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কান দল ২০.১ ওভারে ৪৩ রানে অলআউট হয়ে যায়। এই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা দল ২৫৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়। হাশিম আমলার দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও মর্নি মর্কেল বল হাতে ৪টি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন।
জিম্বাবুয়ে: ৩৮ রান : এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। বর্তমানে যে দলটির সঙ্গে পাকিস্তানি ক্রিকেট বোর্ড বছরে বেশ কয়েকবার প্রতিযোগিতা করে। ২০০১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ১৫.৪ ওভারে ৩৮ রানে গুটিয়ে যায়। এই ম্যাচে চামিন্ডা ভাস ৮ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৮টি উইকেট নেন, যা ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা বোলিং ফিগার।
কানাডা: ৩৬ রান : ২০০৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কানাডা দল মাত্র ১৮.৪ ওভারে ৩৬ রানে গুটিয়ে যায়। ম্যাচটি মাত্র ৪.৪ ওভারে জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ৩৫ রান : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সদ্য যোগদানকারী দল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে নেপালের বিপক্ষে মাত্র ১২ ওভারে ৩৫ রানে গুটিয়ে যায়। নেপালের দুর্দান্ত স্পিনার সন্দীপ লাচিমানে ৬ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৬টি উইকেট নিয়েছিলেন।
জিম্বাবুয়ে: ৩৫ রান : এই তালিকায় দ্বিতীয়বার রয়েছে জিম্বাবুয়ে দল। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তারা ঘরের মাঠে হারারেতে ১৮ ওভারে মাত্র ৩৫ রানে অল আউট হয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়ে।
উল্লেখ্য, চামিন্দা ভাস ৯ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন।
ভোরের আকাশ/নি