logo
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১২:১৭
সরকার নির্ধারিত দামের প্রভাব নেই বাজারে
আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল

সরকার নির্ধারিত দামের প্রভাব নেই বাজারে

টাঙ্গাইলের পার্কবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন একজন পাইকার

টাঙ্গাইলে ডিম, আলু, পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের কোনো প্রভাব নেই। শুক্রবার শহরের বিভিন্ন বাজারে আগের দামেই সব পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে।

 

সরেজমিনে দিনব্যাপী টাঙ্গাইল শহরের পার্কবাজার, সিটি মার্কেট, ছয়আনি বাজার, আমিন বাজার, বেবীস্ট্যান্ড বাজার, সাবালিয়া বাজার, সাবালিয়া বটতলা বাজার, বৈল্যা বাজার, নতুন বাসস্ট্যান্ড বাজার, মেছের মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মের প্রতিটি ডিম ১২-১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের প্রতিহালি ডিম ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার ভেদে প্রতিকেজি দেশি আলু ৫৫-৬০ টাকা ও প্রতিকেজি হাইব্রিড আলু ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৫-৭৮ টাকা এবং প্রতিকেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৬৫-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

টাঙ্গাইল শহরের সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট পার্কবাজারের আলু ব্যবসায়ী আবু সাইদ, সিদ্দিক হোসেন, আবু তাহের ও আবু মিয়াসহ অনেকেই জানান, সরকার আলুর দাম প্রতিকেজি ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও পাইকারি বাজারে এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি। আড়তদাররা দাম কমালে তারাও কম দামে বিক্রি করবেন। যেহেতু কোল্ডস্টোর থেকে আলু আনতেও একটা খরচ হয়- সেটাও তো আলুতেই যোগ হবে। শুক্রবারও তারা প্রতিকেজি দেশি আলু ৫০ টাকা এবং হাইব্রিড আলু প্রতিকেজি ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি করছেন।

 

ওই বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা আক্তার হোসেন, আ. হালিম, বোরহান আলী, শাজান মিয়াসহ অন্যরা জানায়, সরকার বৃহস্পতিবার দাম নির্ধারণ করে সেদিনই কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন। আড়তে নির্ধারিত দামের প্রভাব পড়লেও পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়েনি। আগের দামে কেনা পেঁয়াজ পাইকাররা কম দামে বিক্রি করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাই মজুদ থাকা পেঁয়াজ তারা আগের দামেই বিক্রি করছেন। তারা প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

 

পার্কবাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা মো. সিরাজ মিয়া ও সিটি বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন লেয়ার ফার্মের ডিম আগের দামেই কিনতে হচ্ছে। তাছাড়া আগে কেনা ডিমও তাদের কাছে রয়েছে। তারপরও তারা প্রতিপিস ডিম ১১ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি করছেন। তবে খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১২ টাকার বেশি নেয়া হচ্ছে।

 

টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতা আবুু হানিফ, কদ্দুছ ফকির, মোহাম্মদ আলী, নিরঞ্জন পাল, শংকর পাল, হেলাল উদ্দিন, মোজাম্মেল, আরজু ফকির, ইনছান আলী, ফরিদ মিয়া প্রমুখ জানান, সরকার তিনটি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তারা বিষয়টি জানেন না। পাইকারি বাজারেও তার কোনো প্রভাব নেই। শুক্রবার সকালেও আগের দামেই পণ্যগুলো কিনতে হয়েছে। তাই সে অনুযায়ী বিক্রি করা হচ্ছে। তারা পাইকারদের কাছ থেকে প্রতিদিন কিনে এনে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রি করেন। পাইকারি বাজারে কমদামে কিনতে পারলে ভোক্তা পর্যায়েও কমদামেই বিক্রি করা যায়।

 

তারা জানায়, মূলত: দাম কম বা বেশিতে তাদের বেশিকিছু আসে যায় না। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভোক্তারা। তখন তারা পণ্য পরিমাণে কম কিনেন। তার প্রভাব তাদের বিক্রির ওপরও পড়ে, ওই টুকুই তাদের ক্ষতি।

 

বাজারভেদে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ১২০-১৩০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ৪০-৪৫ টাকা ও বেগুন (গোল) ৭০-৭৫ টাকা, আদা ২২০-২২৫ টাকা, রসুন ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবচেয়ে সস্তায় বিক্রি হচ্ছে কাঁচা পেঁপে, প্রতিকেজি ১৬-২০ টাকায়।

 

টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম জানান, শুক্রবার শহরের পার্কবাজার, মির্জাপুর ও ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী বাজার মনিটরিং করে তিনি জানতে পেরেছেন, সরকার তিনটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার বিষয়ে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা জানেন না। বাজার তদারকি কার্যক্রমের আওতায় সবাইকে এ বিষয়ে অবগতকরণসহ সচেতনতায় হ্যান্ড মাইকিং করা হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সরকার আলু-পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেন। প্রতিপিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। একইসঙ্গে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা এবং আলুর কেজি ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা, কিন্তু তা হচ্ছে না।

 

ভোরের আকাশ/নি