একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ প্রদান করেছেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং জাতির জন্য স্বস্তি ও ভরসার। দেশের মানুষের সম্মিলিত শক্তির জায়গাটি ঊর্ধ্বে তুলে ধরে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, কোনো চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ মাথা নত করেনি, করবেও না। তবে দেখতে হবে, গণতান্ত্রিক ধারাটা যেন ব্যাহত করতে না পারে। আজকের বাংলাদেশ, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণই যে সব ক্ষমতার উৎস এবং তারাই তাদের স্বেচ্ছায় কোনো রাজনৈতিক দলের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুভার ন্যস্ত করেন। অর্থাৎ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই সরকার নির্ধারিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর মনোভাব অত্যন্ত স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক। তিনি বলেছেন, সামনেই নির্বাচন। জনগণ ভোট দিলে থাকব, না দিলে ওই দিকে (বিরোধী দলে) যাব, কোনো অসুবিধা নেই। তবে যতদিন আছি জনগণের কল্যাণ করে যাব। জনগণের ওপর আমরা সব ছেড়ে দিয়েছি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দেশকে পিছিয়ে দেয়ার পাকিস্তানি ধারায় পঁচাত্তর-পরবর্তী অনেক নির্বাচন হয়েছে। তখন সেসব নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে কোনো প্রশ্ন উঠতে দেখিনি। একের পর এক সেনাশাসক তথা অনির্বাচিত স্বৈরশাসক দেশ শাসনের নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। সেসব ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কবে হয়েছে বাংলাদেশে? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই গভীরভাবে ভাবতে হবে।
প্রসঙ্গক্রমে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর ভেতর শুরুতেই রয়েছে জনকল্যাণমূলক সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম সবার জন্য পেনশন স্কিম। সর্বজনীন এই পেনশন স্কিমে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি বিষয়ে আলোকপাত করেন। পূর্ববর্তী সরকারের সময় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। ফলে, মানুষের দুর্ভোগ ছিল চরমে। বর্তমান সরকারের আমলে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ এক যুগান্তকারী অগ্রগতি। তবে মানুষের একটি প্রবণতা হলো, তারা অতীত ভুলে যায় খুব সহজেই।
এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। সে অবস্থায় লোডশেডিংয়ের কথা কীভাবে তাদের মনে পড়বে? তৃতীয়ত, দেশে বর্তমানে অনেকটা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য শেখ হাসিনা দেশবাসীকে নিজেদের সুরক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য মশারি টাঙানো, মশার বংশবিস্তার রোধ করার জন্য বাড়িঘর ও তার আশপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা- এসব সাধারণ বিষয়ও তিনি জনস্বার্থেই উচ্চারণ করেছেন। আমাদের মনে পড়ে, করোনার সময়েও তিনি নিয়মিতভাবেই স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিষয়ে তাগিদ দিতেন, যা উপকার বয়ে এনেছিল। সংসদের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতার বক্তব্য থেকে সংসদ সদস্যসহ দেশের মানুষ যে ইতিবাচক বার্তা পেয়েছেন, সেসব আমলে নিয়ে উদ্যোগী হলে যে সুফল মিলবে, সেটি সুনিশ্চিত।
ভোরের আকাশ/নি