logo
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১০:৫৮
মরিচের চারা বিক্রিতে প্রতারণা, কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ
বগুড়া প্রতিনিধি

মরিচের চারা বিক্রিতে প্রতারণা, কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

প্রতারণা শিকার মরিচ চাষি

বগুড়ার শেরপুরে ক্রয় করতে গিয়েছিলেন বিজলি প্লাস জাতের মরিচের চারা। চারা ক্রয়ের পর জাত অনুযায়ী সার, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করেন কৃষকেরা। কিন্তু ফলন আসার সময় বুঝতে পারেন জমিতে লাগানো মরিচের জাত ভিন্ন। ততক্ষণে মরিচের গাছ ও চাষের জন্য ব্যয় করা অর্থ পুরোটাই গেছে জলে। স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া উপজেলার তিন কৃষক মরিচের চারা ক্রয়ে মেসার্স ভাই বোন নার্সারির মালিক ফজলুল হকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন।

 

ভুক্তভোগী তিন কৃষক হলেন-শেরপুরের শাহবন্দেগী ইউনিয়নের আয়রা সাতান হিন্দুপাড়া এলাকার তিন কৃষক শামিম হোসেন, সুবাদ চন্দ্র, সুমল চন্দ্র এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে।

 

সরেজমিনে হিন্দুপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জমিতে মরিচের ফলন আসতে শুরু করেছে। কিন্তু গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এতে কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে। এর কারণ জানতে চাষী শামীমের সঙ্গে কথা হয়।

 

তিনি বলেন, আমি ফুলবাড়ী ভাই ভাই নার্সারি থেকে বিজলী প্লাস মরিচের চারা ক্রয় করে এনে দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলন আসতে শুরু করেছে আর এই সময়ে গাছগুলো মরতে শুরু করেছে। আর এই গাছগুলো মরার কারণ! নার্সারি মালিক আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমি বিজলী প্লাস চারা তাদের কাছ থেকে ক্রয় করেছি সেটা না দিয়ে সে আমাকে স্টার প্লাস দিয়েছে। আমি বিজলী প্লাস গাছের যে সকল পরিচর্যা ও ওষুধ সেগুলো ব্যবহার করেছি। এতে চারা পরিবর্তন হওয়াতে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। আমি এই দেড় বিঘা জমি থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার মরিচ প্রতি বছর বিক্রয় করি। সেখানে আমার সাথে প্রতারণা করায় খরচ তুলতে পারব কিনা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

 

কথা হয় আরেক কৃষক সুবাদ চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। শুরুতে চারার জাত চেনা যায় না। ফলন আসলে চেনা যায় কোন জাত। আমার সঙ্গেও একই প্রতারণা করেছে। আমি ঋণ করে জমি চাষ করেছি। এখন এই ঋণের টাকা আমি পরিশোধ করব কীভাবে। আমরা এই কৃষি আবাদ করেই সংসার চালাই। আমার সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এই চারা ব্যবসায়ীদের প্রতারণায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এর উপযুক্ত বিচার চাই।

 

সুমল চন্দ্র বলেন, আমি ৩ বছর ধরে বিজলি প্লাস ১৬ শতাংশ জমিতে চাষ করি। এটা দিয়েই আমার সংসার চলে। এবার আমার সঙ্গে চারা ব্যবসায়ী মেসার্স ভাইবোন নার্সারির মালিক ফজলুল হক প্রতারণা করায় আমার জমির গাছগুলো মারা যাচ্ছে। আমি কীভাবে চলব। আমার সব স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল। যদি আমাদের পরিচর্ষার কোনো সমস্যায় গাছ মারা যায় তাহলে একজনের যাবে। আমরা একেকটি গাছের একেক ধরনের চিকিৎসা। আমরা চারা ক্রয় করেছি বিজলী প্লাস চিকিৎসা বা পরিচর্যা করেছি বিজলী প্লাস। সেখানে আমাদের দিয়েছে স্টার প্লাস। এ কারণে গাছগুলো মারা যাচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলবাড়ী রানীনগর এলাকার নার্সারি ব্যবসায়ীরা জানান, একেকটি চারার একেক ধরনের চিকিৎসা বা পরিচর্যা এজন্য গাছ মরতে পারে। তার ওপর এবার খরা চলছে এজন্যও গাছগুলো মারা যেতে পারে। তবে বিজলী প্লাসের দাম বেশি এবং স্টার প্লাসের দাম কম। যে চারা তার নিকট থেকে ক্রয় করেছে সেটা না দিয়ে অন্যটা দিয়ে থাকে তাহলে কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এটা ঠিক করেনি।

 

এ বিষয়ে জানতে মেসার্স ভাইবোন নার্সারির মালিক ফজলুল হকের নার্সারি ও বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল নম্বরে কল করলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

 

উপজেলা কৃষি অফিসার ফারজানা খাতুন বলেন, আমি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে যদি প্রমাণ হয় তাহলে নার্সারি মালিকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি