সিন্ডিকেটের কাছে সরকার যেন অসহায়। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল করতে পারছে না সরকার। সাধারণ মানুষ অসাধু ব্যবসায়ীদের শিকারে পরিণত হয়েছে। সরকার দীর্ঘদিন ধরে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলে এলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। সরকার বাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত কিছু সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করতে পারলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা মানছে না। সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বাজারে মিলছে না ডিম, আলু ও পেঁয়াজ। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয়। এই ঘোষণার পর থেকেই সরকারি সংস্থাগুলো অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। ৮ দিনেও তা কার্যকর করতে পারেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই দফায় ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
এরপরও বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতার এখনো কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে ও আড়তে না কমলে তাদের কম দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। ভোক্তারা বলছেন, সরকার দাম বেঁধে দিয়েই দায় সারছে। শুধু মুখে না বলে সরকারের উচিত প্রতিটি ধাপে পণ্যের মজুত পর্যালোচনা করা এবং বাজারে যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করা। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে মাঠে না নামালে অবস্থার পরিবর্তন হবে না। প্রায় ২ বছর ধরে বাজারের উচ্চমূল্য সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা।
গত বছরের আগস্টে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশে পৌঁছানোর পর গত ৬ মাসে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। এর মধ্যেই দফায় দফায় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে সুযোগ নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাজার মনিটরিং না থাকার কারণে এমন অবস্থার জন্য দায়ী করছে মানুষ। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন নয়। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
সবমিলে নিত্যপণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। করোনা-দুর্যোগে অনেকের আয়-রোজগার কমে গেছে, অনেকেই হয়েছেন কর্মহীন। আসলে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। বাস্তব সত্য হচ্ছে, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পরিপূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্নে রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এর বাইরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের সরকার কঠোরভাবে দমন ছাড়া উপায় নেই। বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। কাজেই সরকারকে মূল ভ‚মিকা নিতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি