logo
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১০:২৭
সিলেট-৪ আসন
আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে আসতে পারে নতুন মুখ
খালেদ উসমানী, সিলেট

আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে আসতে পারে নতুন মুখ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনের সম্ভাব্য ৩ প্রার্থী

জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ নির্বাচনী আসন। এই আসনে ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আব্দুল হাই (আওয়ামী লীগ), ১৯৭৯ সালে নাজিম কামরান চৌধুরী (বিএনপি), ১৯৮৬ সালে ইমরান আহমদ (আওয়ামী লীগ)।

 

১৯৮৮ সালে ইমরান আহমদ পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হান্নানের কাছে, ১৯৯১ সালে আবারো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইমরান আহমদ (আওয়ামী লীগ)। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। পরে এম সাইফুর রহমান এই আসন ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইমরান আহমদ।

 

২০০১ সালে দিলদার হোসেন সেলিম (বিএনপি) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ (আওয়ামী লীগ) ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সিলেট-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিতে নতুন মুখ আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শতাধিক আসনে পরিবর্তনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। দলের নেতৃবৃন্দ মনে করেন আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে তরুণ, মেধাবী, তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা ও যাদের স্বচ্ছ রাজনৈতিক অতীত রয়েছে তারাই দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের তালিকায় রয়েছেন।

 

এদিকে ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের মৃত্যুর পর এই আসনে বিএনপির জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী সংকটে রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সদ্য সাবেক সিলেট সিটি কর্পোরেশনর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন বলে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন। তার প্রধান কারণ আরিফুল হক চৌধুরী দলের সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেননি। দলের প্রতি এমন আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।

 

জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-৪ আসনে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। আমাদের সঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী সব সময় যোগাযোগ করেন। বিএনপি থেকে তাকে এই আসনে মনোনয়ন দেয়া হলে আমরা তার সঙ্গে কাজ করবো। তবে আরিফুর হক চৌধুরী বলেন, আমি সিলেট-১ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিয়ে কাজ করবো।

 

সিলেট-৪ সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ৬ বার নির্বাচিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। তিনি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট-৪ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ইমরান আহমদের দলের মধ্যে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও সম্প্রতি জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক, সিলেট শ্রম আদালতের শ্রমিক প্রতিনিধি নাজমুল আলম রোমেন এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

নাজমুল আলম রোমেন জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল আঞ্চলিক ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে চিকনাগুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক, জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

পাথর উত্তোলনের জন্য প্রসিদ্ধ জাফলং, ভোলাগঞ্জ, বিছানাকান্দি সিলেট-৪ সংসদীয় আসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ পাথর উত্তোলন ও পাথর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলের পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে পাথর শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যার ফলে এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যের ওপর অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন এলাকার অনেক সাধারণ মানুষ। জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল আহমদেও সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যে কেউ কাজ করতে পারে, এটা সবার গঠনতান্ত্রিক অধিকার। তবে আওয়ামঅ লীগ একটি বড় দল এবং সিলেট-৪ একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকেই নমিনেশন দেবেন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। সংসদ নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই।

 

কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদ বলেন, আমাদের নির্বাচনী আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, সবাইকে বলেছি আমি নৌকার পক্ষে কাজ করবো। নৌকা নিয়ে আসেন আমাকে পাবেন। দৈনিক ভোরের আকাশের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নাজমুল আলম রোমেন বলেন, আমি এই অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের পাশে থেকে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

 

আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন দেন এবং আমি যদি নির্বাচিত হই ইনশাআল্লাহ এই আসনের সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।

 

তিনি আরো বলেন, পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার লাখ লাখ শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছে। সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের জন্য কোয়ারি খুলে দিলে একদিকে যেমন শ্রমজীবী মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।

 

নাজমুল আলম রোমেন তার নির্বাচনী আসনের তিনটি উপজেলায় শিল্পাঞ্চলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং এই তিনটি উপজেলায় তিনটি শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান।

 

ভোরের আকাশ/নি