নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার করুণ পরিস্থিতির শিকার হয়ে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালটি চত্বর ৩ ফুট পানির নিচে। ৩ দিন ধরে চারপাশে থৈ থৈ পানির অবস্থানের ফলে হাসপাতালে ঢুকতে ও বের হতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনকে। সেই সাথে সাপের উৎপাত বাড়ায় আতঙ্কের মধ্যে পড়েছে রোগীসহ স্বজন, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা।
গত শনিবার থেকে শুরু বৃষ্টির কারণে হাসপাতাল চত্বরজুড়ে হাঁটুপানি জমেছে। রোববার বিকেল থেকে বৃষ্টি থামায় দুর্ভোগ কিছুটা কমলেও ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে পানি একেবারে কমছে না। বরং আশপাশের পানি এসে এখানেই জমা হচ্ছে। ফলে প্রায় ৩ ফুট পর্যন্ত স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে হাসপাতালের মূলভবনসহ নতুন বিল্ডিং, স্টাফ কোয়ার্টার, মসজিদ, করোনা ইউনিট অর্থাৎ পুরো হাসপাতাল এলাকায় টুইটম্বুর অবস্থা। স্টাফ কোয়ার্টারের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান গেট থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত যেতে পানি মাড়িয়ে অতিকষ্টে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে নারী-শিশু-বয়ষ্করা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে এই সামান্য পথ পাড়ি দিতে রিকশা ভাড়া নিচ্ছেন। নার্স-বয়সহ যারা স্টাফ কোয়ার্টারে থাকেন তারা বাসা ও হাসপাতালে যাতায়াতে হয় পানিতে পা ভিজিয়ে যাচ্ছেন অথবা এটুকু পথ যেতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে রিকশা বা অন্য বাহন ব্যবহার করছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের মুশরত এলাকার আবুল হোসেন বলেন, মানুষ কষ্ট করছে। পানি বের করার কোনো চেষ্টাই নেই কারো। তার ওপর রাতে সাপ ঢুকছে হাসপাতালে। কখন যে কাকে কামড়ায় বলা মুশকিল। মশাও উৎপাত করছে।
কোলের শিশুকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার গৃহিণী আরাফা বেগম বলেন, অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে এসে পানির কারণে আরেক ভোগান্তিতে পড়েছি। অটো থেকে নেমে দেখি গেটের পরই হাঁটুপানি। বাধ্য হয়ে রিকশা নিতে হলো জরুরি বিভাগে যেতে। এটুকুর জন্য অতিরিক্ত ৪০ টাকা খরচ করতে হয়েছে। অনেকে পানি মাড়িয়েই যাচ্ছে। নোংরা পানিতে নামায় অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নাজমুল হুদা বলেন, আমাদের এই হাসপাতালটি বেশ নিচু জায়গায়। সড়ক থেকে প্রায় ৩ ফুট নিচু হওয়ায় চারপাশের পানি এসে এখানে জমে। আর ড্রেন দিয়ে পানি বের হয়ে যে ভাগাড়ে পড়ে সেটা ভরাট হয়ে পড়েছে। তাছাড়া ড্রেনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার না করায় পানি প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেভাবে পানি জমেছে তাতে খুবই দুরবস্থার শিকার হয়ে পড়েছি। এই পানি নিষ্কাশন না হয়ে উল্টো ড্রেন দিয়ে বাইরের পানি ভেতরে ঢুকে পড়েছে। যা সহজে বের করে দেয়া অত্যন্ত দূরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ নেই। রোগীরা বেশ কষ্ট করে আসছে। আমরা চেষ্টা করছি, জরুরি বিভাগসহ ভর্তি রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে।
আরএমও আরও বলেন, গত ৩ দিনে সাপের উৎপাত বেড়েছে। ইতোমধ্যে ৯টি সাপ মারতে হয়েছে। জলাবদ্ধতা স্থায়ী হলে এই দুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। পৌর মেয়রসহ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে অবগত করে সমস্যা সমাধানের জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু মেয়র লোক পাঠালেও কোনো উন্নতি হয়নি।
ভোরের আকাশ/নি