টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলায় ৫ বছরে প্রায় ৭১২০ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে গ্রামীণ জনপদের জীবনমান পাল্টে গেছে। নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া অনগ্রসর শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, শতভাগ বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অনগ্রসর ভাতা, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর প্রদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীর নিবাস, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, স্বাস্থ্যসুরক্ষা কার্ড ইত্যাদি বাড়ানোর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক নিরাপত্তারও মানোন্নয়ন ঘটেছে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের সময়কালে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় সড়ক যোগাযোগ খাতে প্রায় ৬ হাজার ২৩৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নীতকরণে প্রায় ৩ হাজার ৭০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-নাগরপুর-ঘিওর-আরিচা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নীতকরণে প্রায় ১ হাজার ৬৩৫ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার-লাউহাটী সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নীতকরণে প্রায় ১ হাজার ৪৩৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং ৩টি জেলা মহাসড়ক মেরামত ও প্রশস্তকরণে প্রায় ৯৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত খাতে ৪৬৬ কোটি ৮ লাখ টাকার উন্নয়ন হয়েছে। এর মধ্যে দুই উপজেলায় ১৫টি সেতু নির্মাণে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ৪০টি বক্স কালভার্ট নির্মাণে ১২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। টাঙ্গাইল প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন রাস্তা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা। এলজিইডির আইআরআইডি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে।
এমআরআরআইডি প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার ২৬৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে। নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার শিক্ষা খাতের আওতায় ৩৬৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৫৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণে প্রায় ১৫৫ কোটি টাকা, ৪৫টি হাইস্কুল ভবন নির্মাণে প্রায় ১২২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৬০টি হাইস্কুল ভবন মেরামত ও সংস্কারে প্রায় ১২ কোটি টাকা, প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৯টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে ২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং নাগরপুর উপজেলায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
দুটি উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁচা রাস্তার উন্নয়ন ও মেরামত করা হয়েছে। প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এইচবিবি ও ইটের সলিং দিয়ে রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৫০টি মসজিদ ও ১৫০টি মন্দির-শ্মশানের সংস্কার করা হয়েছে। ৭৫০টি সোলার স্ট্রিট লাইট দিয়ে এলাকার অনেকাংশে আলো বিতরণ করা হচ্ছে।
নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলার দুটি ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। দুটি হাসপাতালেই সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট, এক্স-রে, ইসিজি, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন স্থাপন এবং ৬৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দুটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২শ’ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে।
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান জানান, তিনি কিছু আগে নাগরপুরে যোগদান করেছেন। তিনি যতটা দেখেছেন বর্তমান সরকারের সময়ে নাগরপুরের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানরা সরকারি অনুদান ও উন্নয়ন কাজগুলো সততার সঙ্গে করে থাকেন।
টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, বর্তমান সরকারের সময়ে তিনি নাগরপুর-দেলদুয়ারের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়কে প্রাধান্য দিয়ে তিনি এলাকার সড়ক যোগাযোগ, রাস্তা, সেতু, কালভার্ট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রের অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়ন কাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ নজরদারি করেছেন।
তিনি জানান, দুটি উপজেলার আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার নেতৃত্বে একতাবদ্ধ। কয়েকদিন আগে নাগরপুর কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি জনসভায় টাঙ্গাইল জেলার ৮টি আসনের এমপি একমঞ্চে উঠেছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে এটা একটা মাইলফলক।
ওই জনসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/নি