কাগজে কলমে থাকা ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে বাস্তবে ২০টি শয্যা রয়েছে। বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার ৪ গুন বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীও ভর্তি হচ্ছেন। শয্যা না পেয়ে মেঝে-বারান্দায় চাদর ও পাটি বিছিয়ে শুয়ে-বসে আছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। বিছানার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের পায়ের ধুলাবালু উড়ে রোগীর নাকে-মুখে প্রবেশ করছে। এ অবস্থায় রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। এমনই প্রতিদিনকার চিত্র লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শুক্রবার পর্যন্ত মোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৮৫ জন, এখনো ১৮ জন চিকিৎসাধীন আছেন। শুক্রবার সকালে ভর্তি হয়েছেন ৭৭ জন রোগী। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ২৯ জন। আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৩ শতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছেন। রোগীর চাপে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
কথা হয় দ্বীপ ইউনিয়ন চর আবদুল্যাহ থেকে আসা মর্জিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, দু’দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কোথাও জায়গা পাইনি। বাধ্য হয়ে শয্যার পাশে পাটি বিছিয়ে কোনো রকমে আছি। তার সঙ্গে আসা স্বজনরা জানান, চিকিৎসক-নার্সদের সেবায় তারা সন্তুষ্ট। কিন্তু শয্যা না থাকায় কষ্ট হচ্ছে। রোগীকে ডাক্তার দেখাতে এসে এখন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
চর রমিজ বাসিন্দা মো. সুমন বলেন, শুক্রবার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। আসার পর থেকেই দেখছি রোগীর ভিড় লেগেই আছে। সিট না থাকায় মেঝেতে বিছানা পেতে থাকছি। সেই বিছানা ঘেঁষে মানুষজন চলাফেরা করছে। কখনো কখনো বিছানার ওপর দিয়েই মানুষজন জুতা পায়ে চলাচল করছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে ২০ শয্যার হাসপাতালটি চালু করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে কাগজে-কলমে ৩১ শয্যা করা হলেও আগের অবকাঠামো ও জনবলে চলছে হাসপাতালটি। ১০জন চিকিৎসক থাকার কথা, কিন্তু রয়েছে মাত্র ৪ জন মেডিকেল অফিসার। মিডওয়াইফ ৪টি পদই শূন্য। সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৭ জনের মধ্যে আছেন ১০ জন। এছাড়া জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি, শিশু, গাইনি পদ এখন পর্যন্ত শূন্য।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, এক্সরে টেকনোলজিস্ট, অফিস সহকারী, হিসাবরক্ষক, ওয়ার্ড বয়, এমএলএসএস, পিয়ন, সুইপার খালি পদের বিপরীতে কোনো নিয়োগ নেই। একজন অবেদনবিদ আছেন। তিনিও ৩ মাস ধরে অনুপস্থিত। মোট কথা, হাসপাতালের মোট জনবলের ৫০ শতাংশ পদই শূন্য। এ অবস্থায় ইনডোর ও আউটডোর সব জায়গাতেই সেবা দিতে হিমশিম অবস্থা চিকিৎসক ও নার্সদের।
আউটডোরে সেবা নিতে আসা আবদুল খালেক আবু তাহের মান্নান জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপবাড়ছে। দ্রুত হাসপাতালটিকে ৫০শয্যায় উন্নীত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার নাজমা বেগম জানান, প্রয়োজনের তুলনায় শয্যা নেই। এরপর আবার জনবল সংকট। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই যতটুকু সম্ভব হাসিমুখে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামনাশিস মজুমদার জানান, উপকূলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। শয্যা সংখ্যা কম এবং জনবল সংকটের কারনে স্বাস্থ্য সেবায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।
ভোরের আকাশ/নি