শাহীন রহমান: নির্বাচন এগিয়ে আসায় ইসির ব্যস্ততা বাড়ছে। তফসিল ঘোষণার আগেই প্রস্তুতি তারা গুছিয়ে নিতে চায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কতটুকু প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পেরেছে তা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে পর্যালোচনা করতে এবার মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। ওই বৈঠকেই মাঠপর্যায়ের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে কর্মকর্তারা সার্বিক ধারণা তুলে ধরবেন। এজন্য আগামী ৭ অক্টোবর ইসি প্রথমবারের মতো মাঠ পর্যায়েরন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
যদিও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন এখনো অনেকটা অচল অবস্থার মধ্যে রয়েছে দেশ। এ ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি দুই মেরুতে রয়েছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের অনড় পথে অগ্রসর হচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলীয় সমঝোতার কোনো আভাস নেই।
এই অবস্থায় চলতি অক্টোবর মাসকে দেশের রাজনীতিতে উষ্ণমাস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দুপক্ষ থেকেই পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটাম দেয়া হচ্ছে। কেউ তাদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়ছে না। ফলে দিন যতই এগিয়ে আসছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ততই বাড়ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসি।
কর্মকর্তারা বলছেন যেভাবেই হোক নির্বাচনের আয়োজন করতে চায় ইসি। এর পেছেনে রয়েছে সাংবিধানিক নির্দেশনা। সংবিধান ইসির যে ক্ষমতা দিয়েছে এর বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তাদের। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে থেকেই নির্বাচন পরিচালনার সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। গত সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রস্তুতি হিসেবে মাঠপর্যায়ে যারা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবে তাদের আগে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। ১ অক্টোবর থেকে ইউএনওদেরও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। তবে জানা গেছে তফসিল ঘোষণার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হবে আগামী ৭ অক্টোবরের বৈঠকে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমানের পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে (সকল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, সিনিয়র/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) আগামী ৭ অক্টোবর, শনিবার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ওই সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এতে অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ৭ অক্টোবরের বৈঠকে অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে দিক নির্দেশনা দেবেন ইসি।
এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে তাও শুনবেন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। ভোটের সব প্রস্তুতি যথাযথভাবে এগিয়ে চলছে। এছাড়া কমিশন যখন যে নির্দেশনা দেবে ইসি সচিবালয় সেভাবেই সব কাজ সম্পন্ন করবে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে সকল কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে নভেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। এতে ভোটগ্রহণ হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। বর্তমানে নির্বাচনী উপকরণ ক্রয়, ব্যালট পেপার ছাপানো প্রভৃতির কাজ যেমন হাতে নিয়েছে ইসি, তেমন জোরেশোরে চলছে ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত, ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অ্যাপ প্রস্তুতকরণের কাজও। এছাড়া শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রশিক্ষণও।
ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ২ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের আসন্ন ভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডি চূড়ান্ত করা হবে। ভোটার তালিকার সিডি মনোনয়নপত্র কেনার সময় প্রার্থীদের দেয় ইসি। কর্মকর্তারা বলছেন, ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করার পর তফসিল ঘোষণায় সাধারণত বেশি সময় নেয়া হয় না। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবারো সেরকমই করা হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল ইসি। সে অনুযায়ী নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনী বিধিতে সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজও শেষ। এখন হালনাগাদ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। গত ২ মার্চ পর্যন্ত সময়ে নিবন্ধিত ভোটারদের তালিকা চূড়ান্ত করা আছে।
এরপর যারা নিবন্ধিত হয়েছেন, তাদের যুক্ত করে সম্পূরক তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে। সারাদেশে ৪২ হাজার ৩৮০টি ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর চ‚ড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। নির্বাচন সামনে রেখে নতুন দুটি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। দেশীয় ৬৬টি সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। আরো কিছু সংস্থাকে নিবন্ধন দেয়া হবে। এ জন্য এখনো আবেদন নেয়া হচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, এবার একটু আগেভাগেই ইসির সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। যাতে যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন কাজ পরিচালনা করা যায়। প্রস্তুতি অংশ হিসেবে এবার পোর্লিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের আওতায় আসতে যাচ্ছে ইসি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে নিয়েছে ইসি।
সম্প্রতি সিইসি এ বিষয়ে বলেন, আগের নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট নিয়ে অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ আছে। অনেকে আবার এজেন্ট না দিয়েও অভিযোগ করেন। কাজেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে প্রতিটি দল থেকে এজেন্টে দিয়েছেন কি না। এজেন্ট শক্তিশালী হলে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
আবার ‘অবাধ ভোটাধিকার- প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টের ভূমিকা’ নিয়ে একটি কর্মশালা করতে যাচ্ছে ইসি। আগামীকাল ৪ অক্টোবর এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাংবাদিক, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলিয়ে ১২ জন অংশ নেবেন।
ইসি বলছে, নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি রোধে প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টের ভূমিকা, প্রার্থী কী ধরনের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করবেন এবং কীভাবে তাকে দায়বদ্ধ করবেন এসব বিষয়ে সেখানে আলোচনা হবে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি কর্মশালা আয়োজন করার চিন্তা আছে ইসির।
জানা গেছে প্রস্তুতি পর্যালোচনামূলক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি