logo
আপডেট : ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১৪:৫৪
কাশবন এখন চরবাসীর আশীর্বাদ
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কাশবন এখন চরবাসীর আশীর্বাদ

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জন্ম নেয়া কাশবন

কুড়িগ্রামে কাশবনের শুভ্রতায় ছেয়ে গেছে চর ও দ্বীপ চরগুলো। ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জন্ম নেয়া কাশবন প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরো অপরূপ করে তুলেছে। শরতের অবসর দিনে শহরের যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে চোখ জুড়াতে মানুষ খুঁজে নিচ্ছে কাশফুলের শুভ্রতা। কাশফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নয়, বর্তমানে চরাঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকায় অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে জেগে ওঠা নতুন ও পুরোনো চর ও দ্বীপ চরগুলোর পতিত জমিতে দেখা দিয়েছে কাশবন। বিঘার পর বিঘা জমিতে দোল খাচ্ছে কাশফুল। কাশবন দেখতে দূর-দূরান্তর থেকে নানা বয়সি মানুষের সমাগম ঘটে। এই কাশবনগুলো শুধু প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে প্রিয় নয়, এটি এখন চরবাসীর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সাংসারিক নানা কাজে কাশফুলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। জেলার বাইরেও কাশফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে পানের বরজের জন্য রাজশাহী ও বরিশাল অঞ্চলে পানচাষিদের কাছে কাশফুলের প্রচুর চাহিদা। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে গো-খাদ্য সংকট, ঘরে বেড়া তৈরিতে কাশফুলের প্রয়োজন হয়।

 

মুসার চরের মতিয়ার রহমান বলেন, কাশফুলের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। এক সময় আমরা কাঁচা কাশফুলগুলো কেটে শুধু গরু মহিষের খাদ্যের জন্য সংগ্রহ করতাম। এখন বিভিন্ন কাজে কাশফুলের ব্যবহার হচ্ছে। নৌকা করে দূর-দূরান্তে কাশফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পানচাষিরা। পাইকারি দামে প্রতি হাজার কাশফুলের আঁটি ৭-৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বছরই আমরা চরবাসী এই কাশবন থেকে বেশ লাভবান হচ্ছি। এক বিঘা পতিত কাশবন জমিতে খরচ ছাড়াই ১২-১৫ হাজার টাকার কাশফুল বিক্রি করে থাকি।

 

মশালের চরের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছর নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছি। এ বছর ওই জমিতে বালু জমে চর জেগেছে। সেই পতিত জমিতে প্রায় ৫ বিঘা জায়গাজুড়ে হয়েছে কাঁশবন। এতে কোনো প্রকার খরচের বালাই নেই। সাধারণত বন্যা ও বন্যাপরবর্তী সময়ে জেগে ওঠা চরগুলোর পতিত জমিতে কাশবন জন্মে। মাত্র দুই-তিন মাস একটু গরু মহিষের হাত থেকে রক্ষা করতে পারলে কাশবন থেকে ভালো কাশফুল পাওয়া যায়। আশা করছি, ৫০-৬০ হাজার টাকার কাশফুল বিক্রি করতে পারব।

 

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরই বন্যার সময় চারণভ‚মি ডুবে যায়। এ সময় গো খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। আমরা ধান খড়ের পাশাপাশি কাশফুল কেটে গো-খাদ্যের অভাব পূরণ করে থাকি।

 

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চল রয়েছে। এ ছাড়া জেলার ১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলগুলোতে খন্ড খন্ডভাবে সাহস্রাধিক কাশবন রয়েছে। বর্তমানে কাশবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করছে না। পাশাপাশি কাশবন থেকে কাশফুল বিক্রি করে কৃষকরা ভালো আয় করতে পারছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি