স্কুল-কলেজে বন্ধ হচ্ছে না যৌন হয়রানি। বরং দিনদিন এটা আরো বাড়ছে। এতে অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাজ দেখা যায়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার ইংরেজির শিক্ষক আবু সুফিয়ান। ২০১৪ সালে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। প্রথমদিকে বাড়তি টাকা আয়ে নজর ছিল তরুণ এ শিক্ষকের। স্কুলে ক্লাস নেয়ার চেয়েও বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েন প্রাইভেট পড়ানোয়।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে গভর্নিং বডিতে। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর মৌখিকভাবে তার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ আসতে থাকে। অভিভাবকদের অভিযোগ, শুধু ছাত্রী নয়, অনেক নারী অভিভাবকের দিকেও ‘খারাপ নজর’ ও ‘কুপ্রস্তাব’ দিয়েছেন সুফিয়ান।
সুফিয়ানের দুজন সহকর্মী, তার কাছে প্রাইভেট পড়া কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক জানান, প্রাইভেটে বেশ ভালো পড়ান সুফিয়ান। প্রকাশ্যে আচার-ব্যবহারও ভালো। কিন্তু ‘চারিত্রিক ত্রুটি’ রয়েছে তার। প্রাইভেট পড়াতে পড়াতে ব্যাচের দুএকজন ছাত্রীর সঙ্গে ক্লোজ (ঘনিষ্ঠ) হয়ে যেতেন তিনি। অনেক নারী অভিভাবকের সঙ্গেও জমাতেন আড্ডা। ব্যাচ করে প্রাইভেট পড়ানো ঘিরে ছাত্রী ও ছাত্রীর মায়ের সঙ্গেও ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ গড়ে তুলতেন সুফিয়ান। এভাবেই তার মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের ‘সাহস’ জন্মেছে বলে মনে করেন তারা। স্কুলের ক্লাসে স্বল্পসময়ে যা সম্ভব নয়।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা বলেন, ‘তাকে (সুফিয়ান) আমি নিজের ভাই ভাবতাম। মেয়েকে পড়তে দিয়েছিলাম। আমি নিশ্চিন্তে থাকতাম। কিন্তু প্রাইভেট পড়ানোর নামে তিনি যা করেছেন, তাতে আমরা ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় ঘুম হয় না। ছোট-বড় কাউকে আর বিশ্বাসও হয় না।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুরান ঢাকার সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবক শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে বলা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষক ক্লাসের ছাত্রীদের জোর করে নিজের কোচিংয়ে পড়তে বাধ্য করেন। সেখানে কোনো ছাত্রীকে পছন্দ হলে তাকে প্রথমে আকার-ইঙ্গিতে কুপ্রস্তাব দেন। কেউ রাজি না হলে তাকে ক্লাসে কম নম্বর দেন এবং অভিভাবকের কাছে ওই ছাত্রী পড়ালেখায় অমনোযোগীসহ নানা অভিযোগ করেন। বাধ্য হয়ে শিক্ষকের প্ররোচনায় পড়তে হয়েছে আরো কয়েকজন ছাত্রীকে। তারা এ নিয়ে মুখ খুলতে সাহসও পান না।
অভিযোগ পাওয়ার পর সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলের ওই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তবে ১০ মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েনি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসরিন সুলতানা। আর তদন্ত কতদূর এগোল তা জানেন না মাউশি ও ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারাও। গত ১১ সেপ্টেম্বর বাড্ডার আলাতুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক কাজী ফেরদৌস উদ্দিন ভুলুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করে ছাত্রীরা। পরে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয় তারা।
এতে ছাত্রীরা উল্লেখ করে, ফেরদৌস উদ্দিন বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান। সেখানে যারা পড়তে যান না, তাদের নম্বর কম দেন, হয়রানি করেন। ক্লাসে ছাত্রীদের শরীরে হাত দেন। এক ছাত্রীর জামা টান দিয়ে ছিঁড়ে দেয়ার অভিযোগও তোলেন তারা।
এদিকে গত ২৩ আগস্ট মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজির শিক্ষক মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এক ছাত্রীর বাবা। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, তার মেয়ে (ছাত্রী) শিক্ষক মুরাদ আহম্মদের কাছে কোচিং করতো। মুরাদ বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক হওয়া সত্তেও তার মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করতে প্রলুব্ধ করেন। বিভিন্ন সময়ে নানারকম প্ররোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ আগস্ট ছাত্রীকে ওই শিক্ষক তার বাসায় যেতে বলেন।
এতে আরো বলা হয়, ওইদিন রাত ৯টায় আমার মেয়ে শিক্ষকের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে কাউকে কিছু না বলে তার বাসায় চলে যায়। খবর পেয়ে আমরা মেয়েকে উদ্ধার করতে যাই। এ সময় ওই শিক্ষক আমাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে শিক্ষক বাসা থেকে পালিয়ে যান। মেয়েকে উদ্ধার করি আমরা। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা থানায় জিডি করলেও কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পাওয়া যায়নি ‘অজুহাতে’ এমন একটি ঘটনা এড়িয়ে গেছেন ঢাকার নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলে পরিচিত মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি ও শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মুরাদ আহম্মেদ বলেন, ‘অনেক আগে তার (ভুক্তভোগী ছাত্রী) সঙ্গে পরিচয় ছিল। হঠাৎ করে মেয়েটা আমার বাসায় চলে এসেছিল। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।’
অন্যদিকে গত ১৯ মার্চ মাদারীপুরের চরমুগরিয়া নেছারিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। তিনি মাদরাসা ছাত্রীদের তার কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতে বলেন। প্রাইভেটে গেলে বাসায় একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ হবে বলেও ছাত্রীদের প্রস্তাব দেন। বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেয় ছাত্রীরা। তবে ওই শিক্ষক এখনো চাকরিতে বহাল তবিয়তে।
ক্লাসে সময় থাকে ৩০-৪৫ মিনিট। শিক্ষার্থী থাকে ৫০-৬০ কিংবা ১০০ জন। বিরাজ করে পড়ালেখার পরিবেশ। প্রাইভেট-কোচিংয়ে যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিক্ষক যদি নিজ বাসায় ৪-৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়ান, তাহলে সেখানে অনেকাংশে ‘নির্জন’ ও ‘একান্ত’ পরিবেশ বিরাজ করে। শিক্ষক ছাত্রীকে প্ররোচিত করতে পারেন। এমনকি ছাত্রীরও নৈতিক স্খলন ঘটতে পারে। এ কারণে প্রাইভেট-কোচিং ‘নৈতিক স্খলনে’ সহায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড অ্যাডলসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের এ সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘প্রাইভেট-কোচিংগুলো অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এটা যে নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করার মতো একটা জায়গা— সেটা অনেকে ভেবেই নিয়েছেন। অনেক ভুক্তভোগী আসেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে আমার এমনটা মনে হয়েছে। এ ধরনের মনোভাব ও পরিবেশ যেন প্রাইভেট-কোচিংয়ে না থাকে, সেটা অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হবে।’
শিক্ষকের ব্যক্তিগত কোচিং-প্রাইভেট শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য নয়, যৌন হয়রানির প্রবণতাও বাড়াচ্ছে— এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কোচিং বন্ধে একাধিক নীতিমালা হয়েছে। ২০১২ সালের ২০ জুন মাসে কোচিংবাণিজ্য বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে স্পস্টভাবে বলা হয়, ‘সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না।’ কিন্তু এ নীতিমালা মানছেন না শিক্ষকরা। নজরদারিও নেই বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা অধিদপ্তর ও সংস্থাগুলোর। ফলে দেদারসে নিজ স্কুলের শিক্ষার্থীদের জোর করে ব্যক্তিগত কোচিং-প্রাইভেটে আসতে বাধ্য করছেন শিক্ষকরা।
অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ঠেকাতে চলতি বছরই ‘বুলিং, র্যাগিং ও যৌন হয়রানি নিরোধ নীতিমালা’ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী- ‘কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে বা প্রাথমিকভাবে সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ অথচ নীতিমালা হওয়ার পর ঘটে যাওয়া একাধিক যৌন হয়রানির ঘটনায় কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাউশি বা জেলা শিক্ষা অফিস ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেয়ার পথে হাঁটেনি। ফলে অভিযুক্ত শিক্ষকরা অপকর্ম করেও বুক ফুলিয়ে স্কুলেই ঘুরছেন। উল্টো শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন তারা।
নীতিমালা বাস্তবায়নে জেলা শিক্ষা অফিসেরও অনেক দায়িত্ব। তা সঠিকভাবে করতে পারছেন না বলে স্বীকার করেছেন খোদ ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘আসলে এ কাজগুলো বাস্তবায়নে যে জনবল দরকার, তা আমাদের নেই। আপনি বলছেন প্রাইভেট কোচিং চলছে, সেখানে যৌন হয়রানিও ঘটছে; এ অভিযোগ বিষয়ে আমি মোটেও দ্বিমত করছি না। আমাদের আরো সক্রিয়া হওয়া জরুরি। অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে সম্ভব হচ্ছে নয়।’
ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমরা মার্চের প্রতিবেদনে যে তথ্য পেয়েছিলাম, তাতে হতাশ হই। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সব প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানোও হয়। নির্দেশনা দেয়া হয়- কমিটি গঠন, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করতে। মাউশি থেকেও বহুবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে, তা পরবর্তী প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে।’
ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস চলতি বছরের শুরুতে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটি আছে কিনা, তা জানতে চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোতে চিঠি দেয়। সেই চিঠির জবাব পেয়ে একটি প্রতিবেদন করা হয়। মার্চে করা সবশেষ ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী- ঢাকা জেলা ও মহানগরে বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজার ১৩২টি। এর মধ্যে মাত্র ৪১৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন নিরোধ কমিটি রয়েছে। অর্থাৎ, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের কোনো কমিটিই নেই। যেসব প্রতিষ্ঠানে কমিটি আছে, সেখানে কার্যক্রম নেই। নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় কমিটির অনেক সদস্যই জানেন যে, তার কাজ কী!
ঢাকার সেন্ট্রাল গার্লস স্কুলে দুই বছরে তিনটি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে আবার চাকরিতে বহাল করা হয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘কমিটি বলতে কী লাগবে? আমাদের তো গভর্নিং বডি আছে। সেখানে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারেন।’
মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো নামি স্কুলেও যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ কমিটি সক্রিয় নয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শায়লা নাসরিন বলেন, ‘কমিটি তো থাকেই; সবার যেমন আছে, এখানেও আছে। আমাদের এখানে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আশা করি ঘটবেও না।’ যদি ঘটে, সেক্ষেত্রে নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না না ঘটবে না।’
শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রীর কিংবা ছাত্রের যৌন হয়রানি রুখতে শুধু আইন, নীতিমালা কিংবা শাস্তি দিলেই তা বন্ধ করা যাবে না। বর্তমানে যে আকাশ সংস্কৃতি, তাতে সব বয়সিদের মনে যৌন হয়রানির মতো সহিংসতা উসকে দিচ্ছে। এজন্য নিপীড়ক মনন, সহশিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা, সমাজ-সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের সাহসী ও সতর্ক ভ‚মিকা রাখাও জরুরি বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ সেলের আহব্বায়ক হিসেবে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। ড. মাহবুবা কানিজ কেয়া বলেন, ‘কোচিং বা প্রাইভেটে এটা যে ঘটছে, তা তো অস্বীকার করা উপায় নেই। কিন্তু প্রাইভেট-কোচিং তো আপনি পুরোপুরি বন্ধ করতে পারবেন না। বন্ধ করতে হবে হয়রানি-নিপীড়ন। আমি মনে করি- ছাত্রী বা ভুক্তভোগী ও অভিভাবকদের সাহসী হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে ভয়াবহ সব ঘটনা লুকিয়ে রাখে, মুখই খোলে না। লিখিত তো দূরে থাক, মৌখিকভাবেও কাউকে বলে না। এটা মোটেও করা যাবে না। অভিযোগ দিতে হবে, শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। নিপীড়ক যেই হোক তার মনোবল ভেঙে দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও নীতিমালা বাস্তবায়নে আগ্রহী থাকতে হবে। অভিযুক্তকে প্রমাণসাপেক্ষে শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। তাহলে এ প্রবণতা কমে যাবে।’
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সহশিক্ষা না এড়িয়ে বরং সহশিক্ষায় কীভাবে একে অন্যকে সম্মান করতে হয়, তা শেখানোও জরুরি। একজন শিক্ষার্থীকে ছাত্রজীবন থেকে তার মেয়ে বন্ধুকে সম্মান দেয়াটা শেখাতে হবে। তাহলে সে যখন শিক্ষক বা যে কোনো কর্মক্ষেত্রে যাবে, নারীদের প্রতি তার সেই সম্মান থাকবে। শিক্ষার পরতে পরতে সহিষ্ণুতা, বিদ্বেষ এড়ানো শেখাতে হবে। এটা করা গেলে দেখবেন ছাত্রী-শিক্ষকের কাছে নিপীড়নের শিকার হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘শুধু ধর্মীয় মূল্যবোধ দিয়ে যে হয়রানি-নিপীড়ন ঠেকানো সম্ভব নয় তা মাদরাসায় একের পর এক বলাৎকারের ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রয়োজন ক্রিয়াশীল এবং মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার। যেখানে পরম সহিষ্ণুতা ও সম্মান করার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠিত হবে।’
ভোরের আকাশ/নি