‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’ এই প্রবাদকে ভুল প্রমাণ করতেই যেন শেষ পর্যন্ত লড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে তারা মালয়েশিয়ার বিপক্ষে শুরুটাই করেছিল ব্যাটিং ব্যর্থতা দিয়ে। শেষ পর্যন্ত টাইগার অধিনায়ক সাইফ হাসানের ওয়ানডে মেজাজের এক ফিফটিতে বাংলাদেশ ১১৬ রানের মোটামুটি লক্ষ্য দাঁড় করায়। যা নিয়ে ইনিংসের চূড়ান্ত বল পর্যন্ত তুমুল লড়াই করেছে দুই দল। এরপর শেষ বলের মীমাংসা হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ২ রানে।
এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে মেয়েদের দল ব্রোঞ্জ জিতেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে শেষ হওয়া ম্যাচের একপর্যায়ে মনে হয়েছিল, ছেলেদের কপালে বুঝি সেটিও জুটছে না! ব্যাটিং ব্যর্থতার পর লড়াইটা মূলত জমিয়ে তুলেছেন বোলাররা। বাংলাদেশের চেয়ে তুলনামূলক দুর্বল দলের কাছে হারটা ঠেকিয়েছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা স্পিন অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ধ্রুব। শেষ ওভারে মালয়েশিয়ার দরকার ছিল ৫ রান। স্ট্রাইকে তাদের ফিফটি হাঁকানো ব্যাটার থাকলেও তাকে দমিয়ে রেখেছিলেন আফিফ।
জিজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট্ট গ্যালারির দর্শকদের মধ্যে তখন পিনপতন নিরবতা। শেষ বলে মালয়েশিয়ার প্রয়োজন ছিল ৪ রান। আফিফের বলে মালয়েশিয়ান ব্যাটসম্যান সজোরে ব্যাট চালান। ঠিকমতো টাইমিং না হওয়ায় এক রান হয়, আর তাতেই ২ রানের জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ক্রিকেটে মালয়েশিয়া অত্যন্ত দুর্বল দল। সেই দুর্বল দলের বিপক্ষে এশিয়ান গেমসের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খাদের কিনার থেকে জিতেছে বাংলাদেশ। এক সময় জয়ের সম্ভাবনা শেষই হয়েছিল। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ১০ রান। শেষ ওভারে তাদের লাগে মাত্র ৫ রান। তখনও স্ট্রাইকে ছিলেন ফিফটি করা ব্যাটসম্যান ভিরেন্দীপ সিং। অধিনায়ক সাইফ হাসান শেষ ওভারে বল তুলে দেন অভিজ্ঞ আফিফ হোসেন ধ্রুবের হাতে।
এরপর সেই আস্থার যোগ্য প্রতিদান দিয়েছেন আফিফ। দুর্দান্তভাবে তিনি শেষ ওভারে বল করেন। প্রথম তিন বলে ইনফর্ম ভিরেন্দীপ রানই নিতে পারেননি। চতুর্থ বলে ডিপ মিড-উইকেট দিয়ে শট খেলতে গিয়ে আউট হন। তখনই বাংলাদেশের দিকে ম্যাচটি হেলে পড়ে। ম্যাচ টাই করতে মালয়েশিয়ার প্রয়োজন ছিল একটি চার। শেষ দুই বলে মাত্র এক রান করে নেওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচে বাংলাদেশ।
এই ম্যাচটি বাংলাদেশ কোনোমতে জিতলেও নজর কেড়েছে মালয়েশিয়া। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই তারা দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে। শুধুমাত্র অভিজ্ঞতার কারণেই ম্যাচটি হাতছাড়া করেছে তারা। আফিফ ও রিপন মন্ডল টানা দুই বলে দু’টি করে উইকেট নেন। একপর্যায়ে মালয়েশিয়ার প্রতি ওভারে নয়ের বেশি রান লাগত। সেখান থেকে সপ্তম উইকেট জুটিতে ৪০ রান করে মালয়েশিয়াকে ম্যাচে রেখেছিলেন ভিরেন্দীপ। ১৯তম ওভারের ৫ বলে সপ্তম উইকেট জুটির ভাঙন হলে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরে। এর পরের ওভারে আফিফের অসাধারণ বোলিংয়ে সেমিফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।
৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে। ভারতের বিপক্ষে জিতলে বাংলাদেশের গেমসে আরেকটি পদক নিশ্চিত হবে। সেমিফাইনালে হারলে পরেরদিন ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে নামতে হবে তাদের। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের ক্রিকেটেই কেবল এখন পদকের স্বপ্ন বেঁচে রয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি