logo
আপডেট : ৫ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:২৫
আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে ডাহুক পাখি
সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

আবাসস্থল হারিয়ে লোকালয়ে ডাহুক পাখি

প্রকৃতির নীরব পাখি ডাহুক

জলাভূমিতে মনোরম পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী প্রকৃতির নীরব পাখি ডাহুক। আবাসস্থল ধ্বংসের কারণেই মূলত দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অত্যন্ত চতুর ও সতর্ক প্রকৃতির এ পাখি। গ্রাম-বাংলার জলাভূমিতে আগের মতো চোখে পড়ে না প্রকৃতির এ পরিচিত পাখিটি। বুধবার ভোরে উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুরস্থ মাদী পুুকুর পাড়ে আশ্বিনের বৃষ্টিভেঁজা ঘাসে খাবার সংগ্রহ করছিল এক জোড়া ডাহুক।

 

লোকালয়ে খাবার সংগ্রহে আসা ডাহুকের মনোরম দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করার প্রস্তুতি দেখে সতর্ক পাখিটি মুহূর্তেই ফাঁকি দিয়ে চলে যায় বনের আড়ালে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য খাল-বিল, পুকুর, ডোবা ও হাওরময় জলাভূমি। যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং প্রাণীদের বসবাস উপযোগী।

 

সীতাকুন্ড সমাজকল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন জানান, পরিবেশবান্ধব নীরব পাখিদের অন্যতম ডাহুক। প্রাকৃতিক জলাভূমি তথা পুকুর, খাল-বিল, নদীর বাঁকে এদের প্রধান আশ্রয়স্থল। শাপলা, পদ্মার ফাঁকে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বুঝে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত ডাহুক পাখি গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে। ভাসমান শাপলা পাতা কিংবা কচুরি-পানার ওপর দৌড়ঝাঁপ দিয়ে সহজেই খাবার আয়ত্তে আনতে সক্ষম ডাহুক পাখি। বর্ষাকালে সম্প্রসারিত হলেও শীতের শুরুতেই হ্রাস পায় ডাহুক পাখির আশ্রয়স্থল।

 

হালকা প্রকৃতির পাখিটির দৈর্ঘ্য ৩২ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ১৮০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাথা থেকে গলা পর্যন্ত সামনের দিকে সাদা রং ও পেছনের দিকে কালো রঙের দৃশ্যমান ছাপ রয়েছে। আর পুরুষ কিংবা স্ত্রী ডাহুক দেখতে প্রায় একই রকম। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য পাখিদের মতো ডাহুকের বাচ্চাদের মা-বাবা মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দেয় না। ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই প্রকৃতির নিয়মেই ১৫-২০ ফুট উঁচু থেকে লাফ দিয়ে মাটিতে নামতে পারে।

 

মাটিতে নেমেই বাচ্চাগুলো মা-বাবার পেছনে-পেছনে হেঁটে-হেঁটে খুঁজে-খুঁজে খাবার খায়। ডাহুক পাখির ছানাগুলো তুলতুলে নরম ও কালো রঙের হয়ে থাকে। বন-বাদাড়ে বা জলাভূমিতে ঘুরে বেড়ানো গ্রামীণ এ পরিচিত পাখিটিকে নিয়ে লোকসাহিত্যে রয়েছে নানা রচনা। পল্লীকবি জসীম উদদিন ও রূপসী বাংলার জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ কবিরা তাদের লেখনীতে গ্রামীণ এ পাখিটির জীবন চরিত্র রচনা করেছেন।

 

৭নং ওয়ার্ড, আমিরাবাদের বাসিন্দা রতন মিত্র বলেন, একসময় গ্রামের পুকুরে অসংখ্য ডাহুকের বিচরণ দেখা গেলেও বর্তমানে তা শুধুই স্মৃতি। প্রতিনিয়ত আবাসস্থল হারিয়ে ডাহুক আজ খাদ্য সংগ্রহে নামছে লোকালয়ে। একই সুরে কথা বলেন পৌরসদরস্থ দলিল লেখক মো. খাইরুল ইসলাম আকিজ।

 

সীতাকুন্ড উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নগরায়ণ ও শিল্পায়নের প্রভাবে পুকুর, জলাশয় কিংবা দিঘি ভরাট হওয়ায় আবাসস্থল হারিয়ে প্রকৃতির এ নীরব পাখি ডাহুক এখন অসহায়। এক সময় গ্রামীণ পুকুরে ভাসমান শাপলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে ডাহুকের বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। গ্রামীণ এ পুকুরগুলো এখন মাছ চাষিদের দখলে। পুকুরে শাপলা গাছ নিধন ও মৎস্যচাষিদের কঠোর নজরদারিতে আবাসস্থল হারিয়ে নীরব পাখি ডাহুক এখন লোকালয়ে নেমেছে।

 

ভোরের আকাশ/নি