logo
আপডেট : ৫ অক্টোবর, ২০২৩ ১৩:০২
সম্পাদকীয়
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে

খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে

ব্যাংক খাতে নতুন রেকর্ড গড়েছে খেলাপি ঋণ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে ক্রমেই ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে খেলাপি বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। আর এক বছরে (জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। শতাংশের হিসাবে মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশই খেলাপি।

 

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল- এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় হাইকোর্ট বলেছেন, ঋণখেলাপিরা আইনের চেয়ে শক্তিশালী নয়। তাহলে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

 

এর মধ্যে খেলাপি ঋণ হচ্ছে ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০ জনের তালিকা প্রকাশ করা হলেও মোট ঋণখেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫। প্রকাশে সীমাবদ্ধ। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সঠিক উদ্যোক্তাকে না দিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়ার কারণেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে দেশে বিনিয়োগ কম।

 

অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করেও উৎপাদনে যেতে পারছেন না। আবার চাহিদা অনুযায়ী, গ্যাস-বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংকিং খাতে বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। এ কারণেই ব্যাংক থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে ঋণ। দুর্নীতির মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণই পরে খেলাপি হচ্ছে। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ কঠোর হচ্ছে না।

 

যেসব ব্যাংকার দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির এবং সমৃদ্ধির উজ্জ্বল চিত্র আমাদের উল্লসিত করলেও সব উচ্ছাস থেমে যায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির অঙ্ক দেখলে। এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই সচেতন এবং ওয়াকিবহাল। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে।

 

এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও নজরদারি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। খেলাপি ঋণের বিস্তার রোধে এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

ভোরের আকাশ/নি