logo
আপডেট : ৭ অক্টোবর, ২০২৩ ১৪:০৯
সম্পাদকীয়
কতটা আলোকিত করল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

কতটা আলোকিত করল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

বহু প্রতীক্ষার পর একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অবশেষে তার যাত্রা করেছে। আত্মপ্রকাশ হলো নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম গর্বিত সদস্য হিসেবে। বৃহস্পতিবার পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জড়িত রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেছে। ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

 

ঐতিহাসিক এই কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। এই প্রকল্প দেশের উন্নয়নের মাইলফলক। বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশ এখন পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। পরমাণু শক্তি অবিশ্বাস্য ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষমতা যেমন রাখে, তেমন এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে নিশ্চিত করা যায় মানবকল্যাণও। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার জ্বালানির চাহিদা পূরণে যেমন অবদান রাখতে পারে, তেমন চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও রাখতে পারে অবদান।

 

শান্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ এ শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজের ওপর নির্ভর করে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা করছে সরকার। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনই এ মুহূর্তে প্রকৃষ্ট পথ। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে।

 

এখানে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। ১৯৬১ সালে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সেই সময়কার সরকার। ১৯৬৮ সাল নাগাদ জমি অধিগ্রহণসহ বেশকিছু কাজ আংশিক সম্পন্নও হয়। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল ঢেউ শুরু হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। স্বাধীনতার পরে ফের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার।

 

এরপর নানা সীমাবদ্ধতায় এর কাজ আর বেশিদূর না এগোলেও ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এলে গতি পায় প্রকল্পে। ২০০৯ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করলে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। পাবনার ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদীর তীরবর্তী রূপপুর এলাকাকে একাধিক সমীক্ষার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের যথার্থতা যাচাই-বাছাইয়ের পর শুরু হয় এর নির্মাণকাজ।

 

ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের ভৌত এবং অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়ে গেছে ৯০ শতাংশের বেশি। আর দ্বিতীয় ইউনিটের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। রাশিয়ার ঋণ ও কারিগরি সহায়তায় নির্মাণ করা হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই ইউনিটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে রাশিয়া।

 

২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যে গ্রিড লাগবে তা রূপপুর প্রকল্প থেকেই শুরু হবে। অর্থাৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অবকাঠামো তৈরি করছে। এখান থেকে ডেডিকেটেড রেলওয়ে কমিউনিকেশনও তৈরি হবে। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং সেটাকে ধরে রাখতে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। ভিশন-২০৪১ তথা উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্নের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

 

সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের আলোকে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

 

ভোরের আকাশ/নি