logo
আপডেট : ১১ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:৫৬
সঙ্কুচিত হচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন ঈদগাঁ মাঠ
আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল

সঙ্কুচিত হচ্ছে শতাব্দী প্রাচীন ঈদগাঁ মাঠ

টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠে মিনি ট্রাকস্ট্যান্ড

টাঙ্গাইলের শতাব্দী প্রাচীন কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠটি দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। অবৈধভাবে বসানো মিনি ট্রাকস্ট্যান্ড, ট্রান্সপোর্ট ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের আধিক্যে মাঠটিতে ধর্মীয় কার্যাবলি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ফাস্টফুড, চায়ের দোকান, পুরি-সিঙ্গারা ও শরবতের দোকান, বাঁশের বাজার বসানোয় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

 

জানা গেছে, ১৯০৫ সালে ৬ একর জায়গার ওপর স্থাপিত টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠের জায়গাটি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত। সরকারের পক্ষে মাঠের মালিক হলেন জেলা প্রশাসক। কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকেন টাঙ্গাইল পৌরসভা। প্রতিবছর এ মাঠে মুসলমানদের দুটি বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাসহ নানা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত ওখানে বিভিন্ন ধরণের ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বর্তমানে ঈদগাঁ মাঠটি সঙ্কুচিত হয়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

 

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, ১১৮ বছরের পুরোনো কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠের ৬ একর জায়গার মূল ফটকের কাছে উত্তর দিকে বাউন্ডারি দেয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ৮টি চায়ের দোকান, ১টি যৌনশক্তিবর্ধক শরবতের দোকান, ২টি ফাস্টফুড, ২টি পুরি-সিঙ্গারার দোকান। কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠের মাঝখানে অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড বসিয়ে সারি সারি মিনিট্রাক রাখা হয়েছে। মিনিট্রাক স্ট্যান্ডের চাঁদা আদায়ের জন্য অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসে দুজন স্টাফ নির্দিষ্ট রশিদের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করছেন। এর পশ্চিম দিকে বসানো হয়েছে ট্রান্সপোর্ট ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। আগে সেখানে শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করত।

 

আরো দেখা যায়, বড় বড় কাভার্ড ভ্যান থেকে নামানো হচ্ছে হরেক রকমের পণ্য। মাঠে খেলতে আসা বিভিন্ন এলাকার শিশু-কিশোরদের ব্যাটবল হাতে নিয়ে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ৮-১০টি ফিটনেস ক্লাবের সদস্যদের শরীর চর্চা ও খেলাধুলার জায়গা অবশিষ্ট নেই। মাঠের পূর্ব পাশে, পার্কের বাজারের দেয়াল ঘেঁষে পৌরসভার বিভিন্ন অংশ থেকে সংগ্রহ করে আনা বর্জ্য রাখা হয়েছে। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ময়লা-আর্বজনা থেকে উৎকট দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।

 

কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠের দক্ষিণ পাশের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে টাঙ্গাইলের একমাত্র বাঁশের বাজার। পুরো দক্ষিণ অংশজুড়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাঁশ। এছাড়া দক্ষিণ অংশের সীমানা প্রাচীরের পাশে অবস্থিত শহরের অন্যতম পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনটি ময়লা-আর্বজনায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ফলে পৌর এলাকার পশ্চিম অংশে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে।

 

ঈদগাঁ মাঠে মালবাহী ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে মাটি-কাদায় একাকার হয়ে গেছে। ফলে মাঠটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঈদগাঁ মাঠের বৃষ্টির পানি বের হওয়ার একমাত্র ড্রেনটি পৌরসভার ফেলা বর্জ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। পুরো ঈদগাঁ মাঠজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের কাপ, চা তৈরির ব্যবহৃত পাতি, দুটি ফাস্টফুডের দোকানের ব্যবহৃত ওয়ানটাইম প্লেট, গ্লাস, পলিথিন ও ব্যবহার করা টিস্যু পেপারসহ নানা বর্জ্য। এছাড়া ঈদগাঁ মাঠের পূর্বাংশজুড়ে প্রতিদিন সকালে সবজির বাজার বসে থাকে। সবজি বাজারের বহুবিধ সবজির পরিত্যক্ত অংশ মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

 

টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠে কথা হয় স্থানীয় মো. রাসেল খান, মো. আনিছুর রহমান, আব্দুল লতিফ, শরিফুল ইসলাম ভূইয়া, মশিউর রহমান, হাদি উজ্জামান সোহেল, ছাদেক ইসলাম, জামিল সিদ্দিকী, আব্দুল মজিদ সুমন, আনোয়ার হোসেন, হিমেলসহ আরো অনেকের সঙ্গে।

 

তারা ক্ষোভের সাথে জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ঈদগাঁ মাঠে মিনি ট্রাকস্ট্যান্ড বসানো হয়েছে। অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে চায়ের দোকান, শরবতের দোকান, ফাস্টফুড, সিঙ্গারা-পুরির দোকান। প্রতিদিন ট্রান্সপোর্টের মালামাল নামানোর স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এ জায়গাটি। তারা অবিলম্বে ঈদগাঁ মাঠ থেকে ট্রাকস্ট্যান্ডসহ সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার দাবি জানান।

 

ঈদগাঁ মাঠে গড়ে ওঠা মিনি ট্রাকস্ট্যান্ডের নেতৃত্বদানকারী শ্রমিক নেতা মো. হোসেন আলী ও রুবেল মিয়া জানান, শহরের স্টেডিয়াম পুকুরের সামনে থেকে ট্রাকস্ট্যান্ডটি উচ্ছেদ করার পর তারা পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলে অস্থায়ীভাবে ঈদগাঁ মাঠে ট্রাকস্ট্যান্ডটি স্থাপন করেছেন।

 

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, বিভাগীয় কমিশনার গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পুকুরের সামনে থেকে ট্রাকস্ট্যান্ডটি সরিয়ে ঈদগাঁ মাঠে অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই ঈদগাঁ মাঠে ট্রাকস্ট্যান্ডসহ কোনো ধরনের দোকান করার সুযোগ নেই। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে টাঙ্গাইল পৌরসভা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠ সংস্কারের কাজ শুরু করবে।

 

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠে ট্রাকস্ট্যান্ড স্থাপন করার কোনো ধরনের অনুমতি দেয়া হয়নি। যদি কেউ বিনা অনুমতিতে ট্রাকস্ট্যান্ড বসিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, বিষয়টির সম্পর্কে তিনি অবগত নন। ঈদগাঁ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব টাঙ্গাইল পৌরসভার। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

ভোরের আকাশ/নি