গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দা গ্রামের বুড়াইল নদীর ওপর নির্মিত কাঠের সাঁকো টানা বৃষ্টির পানির স্রোত ও কচুরি পানার চাপে ভেঙ্গে নদীতে পড়ে গেছে। এতে যাতায়াতের জন্য দু’পাড়ের মানুষের চরম দূর্ভোগ তৈরি হয়েছে।
প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জরুরি প্রয়োজনে দু’পাড়ের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন। এই স্থানে সেতু নির্মাণসহ রাস্তা পাঁকাকরণের দাবি এলাকাবাসির।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দুই যুগ থেকেই ঝুঁকি নিয়ে দুই পাড়ের মানুষ বুড়াইল নদী নৌকায় পারাপার হতেন। সাত বছর আগে এলাকাবাসি সম্মিলিতভাবে বাঁশ-কাঠ সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন নদী পারাপারের জন্য। তখন থেকেই বুড়াইল নদীর পশ্চিমে নিজামখাঁ, ঘগোয়া, চাচিয়া, রংপুরের তালেরহাট, তাম্বুলপুর, পীরগাছা ও পূর্বে চরখোর্দ্দা, চর লাটশালা, চর তারাপুরসহ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার লোকজন পারাপার হতেন এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে। সাঁকোটি বাঁশের হওয়ায় প্রতিবছর মেরামত করতে হয়।
পরে যোগাযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর আর্থিক সহযোগিতায় ৩ বছর আগে বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে ওইস্থানে একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। তীব্র পানির স্রোত ও কচুরিপানার চাপে দুই সপ্তাহ আগে পারাপারের একমাত্র ভরসা বুড়াইল নদীর উপর নির্মিত কাঠের সাঁকোটি ভেঙ্গে নদীত্ব পড়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় পারাপার হতে না পেরে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ খোর্দ্দাচরের স্কুলের বাজার ও লাটশালার নতুন বাজারের ব্যবসায়িরা। এ সাঁকোর পাশেই দেশের সর্ববৃহৎ সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র 'তিস্তা সোলার লিমিটেড' অবস্থিত। প্রতিদিন এখানকার উৎপাদিত ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
এছাড়া রয়েছে আলীবাবা থিম পার্ক। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আলীবাবা থিম পার্কের দর্শনার্থীরাও পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে বুড়াইল নদীর দুই পাড়ের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনে মানষজন ডিঙ্গি নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। অনেকেই ২৫ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করছেন।
মিজানুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীয়রা। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও এ অবহেলিত এলাকার প্রতি কেউ তাকায়নি। কোন রাস্তা পাঁকাও হয়নি। হয়নি কোন সেতু নির্মাণ। তাই এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মানও বাড়েনি।
খোর্দ্দা গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, একটি সেতুর অভাবে আমাদের এলাকায় কোন উন্নয়ন হয়নি। সবাই শুধু ভোট নিয়ে যায়, কেউ উন্নয়ন করেনা। একটি সেতু নির্মাণসহ খোর্দ্দা ও লাটশালা গ্রামের রাস্তা পাঁকা করার দাবি জানাচ্ছি।
আরিফুল ইসলাম নামের এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী বলেন, কাঠের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে। দীর্ঘ সময় নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। একটা সেতু হলে চরাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের দুঃখ ঘুচবে।
ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, প্রতি বছর এ সাঁকো মেরামত করতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এলাকাবাসি, ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় এমপির আর্থিক সহযোগিতায় এ ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এই স্থানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা দরকার।
এ বিষয়ে তারাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম লেবু বলেন, বুড়াইল নদীতে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আশা রাখি শীঘ্রই সেতু নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. শামসুল আরেফিন খান বলেন, ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণে অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পাস হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/নি