logo
আপডেট : ১৭ অক্টোবর, ২০২৩ ১২:৫২
বর্ণিল সাজে সাজছে বঙ্গবন্ধু টানেল
মো. ইব্রাহিম শেখ, চট্টগ্রাম

বর্ণিল সাজে সাজছে বঙ্গবন্ধু টানেল

বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রবেশপথ

প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে টানেল গোলচত্বর রং-বেরঙে সাজানো হচ্ছে। দেশের প্রথম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধন করতে দীর্ঘ দুই যুগ পর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

 

২৮ অক্টোবরে তার আগমনকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগরীসহ আনোয়ারা-কর্ণফুলী পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ।

 

আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের কেইপিজেড মাঠে চলছে জনসভা মঞ্চ তৈরির কাজ। স্থানীয় সংসদ সদস্য ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বডুয়াসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে এটি সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করেছেন। সমাবেশের দিন মাঠের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার লক্ষ্যে গতকাল শনিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বাসায় আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী। সভা সঞ্চালনা করেন আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান তালুকদার।

 

বৈরাগ ইউনিয়নের কেইপিজেড মাঠে চলছে জনসভাস্থল তৈরির কাজ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভ‚মিমন্ত্রী আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা, উপজেলা ও পাড়া-মহল¬ায় চট্টগ্রামসহ দেশের উন্নয়ন বার্তা প্রচারে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন।

 

পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

 

এই টানেল নির্মাণের ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে অন্তত ৫০ কিলোমিটার। আসবে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লাবিক পরিবর্তন। নদীর তলদেশে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে গাড়ি। সাশ্রয় হবে জ্বালানি ও সময়। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর সড়কের আইল্যান্ড এবং টানেল গোলচত্বর রংবেরঙে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। জনসভাকে ঘিরে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে কার্পেটিং এবং সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। দলের নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের মাঝে চলছে উৎসবের আমেজ।

 

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে টানেলের সড়ক রংবেরঙে সাজানো হচ্ছে। দেশের প্রথম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রাম বর্ণিল সাজে সাজছে। সড়কের আশপাশ এলাকায় চলছে রঙের কাজ। ইতিমধ্যে ২৮ অক্টোবরের ক্ষণ গণনা শুরু করেছে চট্টগ্রামবাসী।

 

দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দের শেষ নেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত, পাড়া-মহল্লা ও হাট-বাজারে চলছে টানেল নিয়ে আড্ডা। প্রতিদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের স্থান পরিদর্শনে আসছে সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

 

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুর হক চৌধুরী ও কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে ওঠা চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে ঘিরে আমরা টানেল উৎসব পালন করব। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রস্তুত।’

 

২৮ অক্টোবর আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের কেইপিজেড মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫ বছরের উন্নয়ন জনগণের মাঝে তুলে ধরা হবে। উন্নয়নের মধ্য দিয়েই জনগণ সরকারের মূল্যায়ন করবেন। সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে।’

 

ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারা ওয়ান সিটি, টু টাউনের দ্বার উন্মোচন করবেন। নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় মানুষের ঢল নামবে।

 

৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটারের এ টানেল শুধু দুই পাড়কে সংযুক্ত করেনি, ওয়ান সিটি টু টাউন কনসেপ্ট বাস্তবায়িত হয়েছে। মাত্র তিন মিনিট থেকে সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পার হওয়া যাবে। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯.৫ শতাংশ। এ প্রকল্পে কিছু ভবন নির্মাণের কাজ বাকি আছে সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।

 

টানেলের এক প্রান্তে চট্টগ্রাম শহর অপর প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারা উপজেলা। শহরের খুব কাছে থাকলেও এ উপজেলা এতদিন অবহেলিত ছিল। টানেল নির্মাণের মধ্যে দিয়ে আরেকটি শহরে রূপ নিচ্ছে আনোয়ারা।

 

ভোরের আকাশ/নি