নিজের মনকে প্রশান্তি দেয়ার এক বড় সুযোগ ভ্রমণ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণরসিকরা। পাহাড় কিংবা সমুদ্র কোথাও এখন খালি নেই। সর্বত্র মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটকদের আনাগোনায়। ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে গিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা যেমন উচ্ছ¡সিত তেমনি ব্যস্ততা বাড়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্যমতে, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবানের মতো দেশখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঢল নেমেছে পর্যটকদের। বাড়তি গ্রাহক পাওয়ার আশায় বিভিন্ন অফারও দিচ্ছেন হোটেল-মালিকরা। ব্যস্ততা বেড়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের। কক্সবাজারে এসেছেন লাখো পর্যটক।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল শুরু হয়েছে। এর ফলে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। উৎসবে মেতেছে পুরো কক্সবাজার। শুধু সমুদ্রসৈকত নয়, পর্যটকরা ছড়িয়ে পড়েছেন জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোতে। তাদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সমুদ্রসৈকতজুড়ে সাজ সাজ রব। সবচেয়ে সুন্দর করে লাবণী পয়েন্ট সাজানো হয়েছে। সৈকতের পূর্বমুখী করে তৈরি হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মঞ্চের সামনে লাবণী সড়কের দুই পাশে সারি সারি অস্থায়ী দোকানও নির্মাণ করা হয়েছে। কল্লোল হোটেলের সামনে তিন রাস্তার মুখে বসানো হয়েছে কাঠের তৈরি রঙিন নৌকা। এসব স্থান লোকে লোকারণ্য।
শুধু সৈকত নয়, দিনব্যাপী সেন্টমার্টিন, ইনানীর পাথর রানি সৈকত, হিমছছড়ি ঝরনা, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, শহরের বার্মিজ মার্কেট, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ সব বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরেছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট-গেস্টহাউসের সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। লক্ষাধিক পর্যটক এসেছেন। গত কয়েকদিন ধরেই ছাড় চলছে। শেষ সময়ে যারা এসেছেন হয়তো তারা ছাড় পাননি।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুরো সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে বলে জানালেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, মেলায় নিরাপত্তায় ঘাটতি নেই। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করা হচ্ছে। পর্যটন দিবস উপলক্ষে পর্যটকদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান বান্দরবানের ব্যবসায়ীরা করোনা ও বন্যা তার ওপর পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠির উপদ্রবের কারণে বেশ খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেছে বান্দরবানের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিলো বান্দরবানে পর্যটকদের আগমণ। এতে বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে ক্ষুদ্র থেকে বড় ব্যবসায়ীদের। তবে এবার টানা তিন দিনের ছুটিতে সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে চান ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান ভ্রমণপ্রত্যাশীদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে জেলার বেশকিছু হোটেলের অধিকাংশ কক্ষ আগাম বুকিং নিয়ে রেখেছেন পর্যটকেরা। দীর্ঘসময় পর পর্যটন ব্যবসায় ক্ষতি গুনতে গুনতে হঠাৎ করে বুকিং হওয়ায় খুশি বান্দরবানের হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা। পর্যটকরা ভ্রমণের জন্য মেঘলা, নীলাচল, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক, শৈলপ্রপাত, নীলগীরি, দেবতাকুমসহ বেসরকারিভাবে তৈরি নানা বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় জমাচ্ছেন।
বান্দরবান আবাসিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসেসিয়েশনের সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন, বান্দরবানে এখন পর্যটকদের জন্য প্রতিদিনই নতুন নতুন স্থাপনা তৈরির পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে নানা সুযোগ সুবিধা, আর দীর্ঘসময় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও বন্যার কারণে জেলার পর্যটন ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবারের এই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
এদিকে বান্দরবানে ভ্রমনে আসা সব পর্যটককে সার্বিক নিরাপত্তা ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সার্বিক উন্নয়নে প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দীন।
সাজেক-কাপ্তাইয়ে খলি নেই রিসোর্ট-কটেজ পাহাড় ঘেরা সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা রাঙামাটি। পাহাড়ের উপর সাদা মেঘের দলছুট ও কাপ্তাই হ্রদের স্থিও জলরাশি দেখতে এবং শীতল ঝর্ণায় গা ভেজাতে ছুটে আসেন পর্যটকরা। বন্ধ পেলেই হ্রদ পাহাড়ের এ জেলায় প্রতিনিয়ত ছুটে যান ভ্রমণ-রসিকরা। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। পাহাড় আর মেঘেদের মিতালি দেখতে ছুটে এসেছেন পর্যটকরা।
এছাড়া প্রথম বারের মতো জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত চার দিনব্যাপী পর্যটন মেলা নজর কাড়ছে সবার। তবে বিনিয়োগের অভাব, অব্যবস্থাপনার কারণে এই অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা, যার দরুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই অঞ্চলের পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
তবে অনেক কিছুর পরেও পাহাড়ের সুধা নিতে ভুলেন না পর্যটকরা। পাহারে শীতিলতা ও নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকন করছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাঙামাটির সাজেক-কাপ্তাইয়ে ছুটে এসেছেন অসংখ্য পর্যটক। ছুটিতে বেড়াতে এসে রিসোর্ট-কটেজে কক্ষ না পেয়ে কয়েক শ পর্যটক রাস্তা, বারান্দা, স্টোর রুম, গাড়িতে রাত কাটিয়েছেন বলে জানা গেছে। শুধু সাজেক পর্যটনকেন্দ্র নয়, রাঙামাটি শহরের আবাসিক হোটেল-মোটেল ও পর্যটন কমপ্লেক্সের কক্ষগুলোও বুকিং চলছে। কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে গড়ে ওঠা রিসোর্ট-কটেজগুলোও বুকিং করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকৃতি কন্যা ও রাঙামাটির ছাদখ্যাত সাজেক ভ্যালিতে ভিড় করেছেন হাজারো পর্যটক। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতার বাঘাইছড়ি সাজেক ভ্যালিতে সকালের সূর্যোদয়ের সাথে মেঘের মিতালী দেখতে হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করছেন রুইলুই হ্যালী প্যাড, কংলাক পাহাড় ও ঐতিহ্যবাহী লুসাই গ্রামে।
ভোরের আকাশ/নি