‘বংশাই নদে সেতু হয়নি। সেতু না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন ১৫ গ্রামের মানুষ। দুর্ভোগ সহ্য করে এলাকাবাসী বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে কাঠের সাঁকো দিয়ে এই নদ পারাপার হচ্ছেন। সেতু না হওয়ায় এলাকার রাস্তাসহ অন্য কোনো উন্নয়নও তেমন হয়নি।’ এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন পল্লিচিকিৎসক সেন্টু তালুকদার।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের গাংগাইর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বংশাই নদের তীর ঘেঁষেই তার বাড়ি। তার মতো হাজারো মানুষের দাবি ধলাপাড়া-গাংগাইর এলাকায় বংশাই নদে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করার।
সরেজমিন দেখা যায়, বংশাই নদে খেয়া নৌকার পরিবর্তে একটি কাঠের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। উঁচু-নিচু হওয়ায় বয়স্ক মানুষ, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। নিরুপায় হয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত হচ্ছেন পারাপার।
উপজেলার ধলাপাড়া ও দেওপাড়া ইউনিয়নের গাংগাইর, সরাশাক, আমজানি, বাদে-আমজানি, গোলাবাড়ি, মলাজানি, জুগিয়াটেংগর, নয়ারহাট, সরিষাআটা, শরাতৈল, বর্গাসহ ১৫টি গ্রামের মানুষকে যাতায়াত করতে হয় বংশাই নদ পার হয়ে। এলাকার সরাসাক গ্রামে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গাংগাইর গ্রামে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া ধলাপাড়া বাজার, মসজিদ-মাদ্রাসা, কলেজ ও মাধ্যমিক বালক এবং বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বংশাই নদী পার হয়ে লেখাপড়া করতে যেতে হয়।
দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পার হলেও স্থানীয়রা বংশাই নদের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণে দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি, দ্রæত এখানে একটি পাকা ব্রিজ করে দেয়া হোক। তাহলে এই এলাকার মানুষের দীর্ঘ সময়ের দুর্ভোগ দূর হবে।
সরাশাক গ্রামের শিক্ষার্থী রাজিব সাহা বলেন, বংশাই নদে সেতু না থাকায় গ্রামে পাকা সড়ক হয়নি। বর্ষা মৌসুমে খেয়া নৌকায় পারাপার হতে সময় লাগে প্রায় ২০ মিনিট। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াত, ফসল পরিবহনসহ উপজেলা সদরে যেতে হয় এই নদী পার হয়ে। ভরা বর্ষায় খেয়া নৌকাডুবি এবং শুকনোয় কাঠের সাঁকো পার হতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
একই গ্রামের নূরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও বংশাই নদে সেতু নির্মিত হয়নি। অথচ প্রতিদিন ১৫টি গ্রামের শত শত মানুষকে এই নদের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। আমি সরকারের কাছে দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।
দক্ষিণ ধলাপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
খেয়াঘাটের মাঝি দুলাল মিয়া বলেন, প্রায় ২৬ বছর ধরে নৌকা দিয়ে মানুষ পারাপার করছি। এ জন্য বছরে সবার কাছ থেকে নির্দিষ্ট টাকা এবং ধান নিয়ে থাকি। বর্ষা মৌসুমে খেয়া থাকলেও শুকনো মৌসুমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করি। তবে এখানে একটি সেতু হলে আমাদের কষ্ট অনেক লাঘব হবে।
ধলাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, দীর্ঘদিনের এ সমস্যা নিরসনে সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও এমপি মহোদয়কে অবগত করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি হবে।
ঘাটাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, বংশাই নদে ব্রিজের অভাবে স্থানীয় জনগণের দুর্ভোগের কথা তিনি অবহিত আছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে কার্যকরী উদ্যোগ নেবেন।
ভোরের আকাশ/নি