logo
আপডেট : ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ১৩:২০
গাইবান্ধার বিল জলাশয়ে চলছে ঐতিহ্যবাহী দলবদ্ধ মাছ শিকার ’বৈদ’
রিফাতুন্নবী রিফাত, গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার বিল জলাশয়ে চলছে ঐতিহ্যবাহী দলবদ্ধ মাছ শিকার ’বৈদ’

গাইবান্ধার বিল জলাশয়ে পানি কমে যাওয়ায় চলছে মাছ ধরার মৌসুম। সেই সাথে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী দলবদ্ধ মাছ শিকার বৈদ বা বৈত। কিন্তু আজকাল কোথাও কোথাও মালিকানা দাবি করে বাধা দেওয়া হয় অভিযোগ বৈদ দলনেতাদের।

 

সরেজমিনে রবিবার (২২ অক্টোবর ) দুপুরে সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের নলি গলি বিলে দেখা যায় বৈদ নামের দলবদ্ধ হয়ে মাছ শিকার করছেন। মাছ শিকারীদের হাতে ও কাঁধে নানা ধরনের মাছ ধরার উপকরণ। পলো, হ্যাংগা জালি, পলো জালি, হ্যাগা, মুঠ জাল, কোঁচ, ক্যাটা ও ঝাঁকি জাল। তারা নলি গলি বিল থেকে যাবেন টাকি মারি বিলে। তারপর যাবেন ঢোল মারা বিলে। কর্মব্যস্ত মানুষের জীবন থেকে ক্রমাগত হারিয়ে যাওয়া এই উৎসবে অংশ নেন তিনশতাধীক নানা শ্রেনি পেশার মানুষ।

 

কথা হয় বৈদ এ অংশ নেয়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা এলাকা থেকে আসা কৃষক এনামুল হক (৫৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, মাছ ধরতে তার খুব ভালো লাগে, আর যদি হয় বৈদ তাহলে তো কথাই নাই। তিনি বলেন, খবর পেয়ে সকালেই এখানে এসেছি। এসে বৈদ এ অংশগ্রহণ করেছি। একটা মাছও পাইনি। তাতে সমস্যা নাই অংশগ্রহণ করতে পারছি এটাই বেশি আনন্দের।

 

বিলে পলো নিয়ে নেমে পড়েছেন সেলিম মিয়া (২৯)। তিনি এসেছেন বল্লমঝাড় ইউনিয়নের খামার-বল্লমঝাড় গ্রাম থেকে। ভাগ্যক্রমে তিনি পেয়েছেন মাঝারি সাইজের একটি রুই মাছ। মুখ ভরা হাসি দিয়ে বললেন, এই দলে কম করেও তিন-চার’শ মানুষ আছেন। শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়, ছাত্র, কৃষক সবাই আজ মিলেমিশে একাকার।

 

এলাকার বৈদ শিকারি নামে পরিচিত মকবুল মিয়া। মাছ পেয়েছেন দুইটা। এরমধ্যে একটি শৈল আর একটি রুই। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, বৈদ এ অংশগ্রহণ করা কারো কারো বয়স ৬০ থেকে ৬৫ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু দেখেন, মাছ মিলুক আর না মিলুক তারা মাছের নড়াচড়া টের পেয়েই লাফিয়ে পড়ছেন। এদের মধ্যে কেউ ৮ থেকে ১০টা মাছ পাবে, আবার কাউকে ফিরবে শূন্য হাতে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলাতেই সৌখিন এই মাছশিকারির পৃথক পৃথক দল রয়েছে। বৈদ দলের আলোচনার ভিত্তিতে মাছ শিকারের নির্দিষ্ট জলাশয়, তারিখ, সময়, যাত্রার স্থান নির্ধারণ করে জানিয়ে দেয়া হয়। এই বৈদের দলের একজন দলনেতা থাকে। যার কাছে থাকে মহিষের শিং দিয়ে তৈরি বড় একটি বাঁশি। যাকে বলা হয় বৈদের শিংগা। যা দিয়ে উচ্চস্বরে শব্দ অনেক দূর থেকে তা শোনা যায়।

 

পূর্বনির্ধারিত এলাকায় এসে শিংগায় ফু দেওয়া হয়। আর শিংগার আহ্বানে নিজ নিজ পছন্দমতো মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম নিয়ে সমবেত হতে থাকে মৎস্য শিকারিরা। পরে বিল বা জলাশয়ে দলবদ্ধ হয়ে মাছ শিকার চলে। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, যে কেউ এতে অংশগ্রহণ করতে পারে। বৈদে মাছ মারা চলে সকাল থেকে বিকেল ৩টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত। চলে এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে। এতে অনেক মাছ পায় আবার অনেকে একটি মাছও পায় না।

 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার বৈদ এর দলনেতা গিয়াস উদ্দিন (৪৯) বলেন, মাছ না পেলেও বৈদ শিকারিদের কোনো দুঃখ নেই। কেননা এখানে দলবদ্ধভাবে মাছ ধরতে যাওয়ার আনন্দটাই মুখ্যবিষয়।

 

তিনি অভিমান-অনুযোগ করে বলেন, আগে বৈদ দল জলাশয়ে নামলে সবাই খুশি হতো। ভিড় করে দেখতে আসত। কিন্তু আজকাল কোথাও কোথাও মালিকানা দাবি করে বাধা দেওয়া হয়। অনেক সময় ফিরে যেতে হয় মাছ শিকার না করেই।

 

ভোরের আকাশ/নি