logo
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:৫৯
বিষখালী নদীর ভাঙন, ভাঙনরোধে কাজে আসছে না জিও ব্যাগ
বরগুনা প্রতিনিধি

বিষখালী নদীর ভাঙন, ভাঙনরোধে কাজে আসছে না জিও ব্যাগ

বরগুনার বেতাগী উপজেলার বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে

বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রায় ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙনকবলিত। পৌরসভার লঞ্চঘাট ও কাঠবাজারের মধ্যে আধা কিলোমিটার রক্ষা বাঁধটি বেশ ঝুঁঁকিপূর্ণ। কাঠবাজার মূল রক্ষাবাঁধের প্রধান সড়কটি বিষখালী নদীর ভাঙনে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে নদীর তীর ঘেঁষে দেয়া হয়েছে ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগের বস্তা। তবে, ভাঙনরোধে তাও কাজে আসছে না। ভাঙনকবলিত এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনই যেন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

স্থানীয়দের দাবি, এসব অনিয়ম দেখেও নিশ্চুপ প্রশাসন। তবে প্রশাসন বলছেন, বিষখালীর ভাঙন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে প্রথম পৌরশহরকে রক্ষায় বিষখালী নদীতে ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়। এরপর ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ভেঙে যাওয়া শহর রক্ষা বাঁধ স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য ২০১১ সালে পুনরায় উদ্যোগ নেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুধু ব্লক তৈরি করে বাঁশ, বালু ও বস্তার চট রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়।

 

পরে ২০১৭ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক বিষখালী নদীর ভাঙন থেকে পৌর শহরকে রক্ষা করতে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পের দৃশ্যমান যেটুকু ছিল তা ওই ভিত্তিপ্রস্থরের নাম ফলকমাত্র। সেই ভিত্তিপ্রস্থরটিও বর্তমানে ভাঙনের মুখে পড়ে নদীগর্ভে বিলীনের পথে।

 

সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে একনেকের ১১তম সভায় বেতাগী শহর রক্ষাসহ বিষখালী নদীর অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অংশের প্রতিরক্ষা প্রকল্পে ৪০৪ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু ভাঙন তীব্রতর হলেও এখনো পর্যন্ত বাস্তবে কোনো কাজ শুরু হয়নি। ফলে ঝুঁকির মুখে রয়েছে পৌরশহরের শতাধিক ব্যবসায়ী ও বসতভিটা হারানোর শঙ্কায়ও রয়েছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা।

 

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরশহরের কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই বললেই চলে। উপজেলা প্রশাসন ও থানার পুলিশকে হাত করে ভাঙন এলাকার অতি নিকটেই ড্রেজার বসিয়ে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করছেন একটি অবৈধ চক্র। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন যেতে না যেতেই ওই এলাকায় পুনরায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এতে পাউবো কর্তৃপক্ষের অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হলেও ভাঙন রোধ হচ্ছে না। ফলে কোনো কাজেই আসছে না জিও ব্যাগের বালুর বাঁধ।

 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিষখালী নদীর ভাঙন শুরু হওয়ায় বেতাগী লঞ্চঘাটের পশ্চিম-উত্তর দিকে শহররক্ষা বাঁধের ওপর নির্মিত পাকা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। সড়কের দুই পাশে স’মিল, হোটেল, চায়ের দোকান, আসবাবপত্র ও কাঠের দোকান মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত দোকান রয়েছে।

 

স্থানীয়রা বলছেন, যে কোনো সময় রাস্তা ভেঙে ওইসব দোকান নদীতে বিলীন হতে পারে। এছাড়া ভাঙনকবলিত স্থানের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বেতাগীর বন্দর, উপজেলা পরিষদ, মডেল মসজিদ, হাসপাতাল, কালীমন্দির, শ্মশানঘাট ও পুরাতন ডাকবাংলো। যা বড় কোনো জলোচ্ছা হলে পুরো পৌরশহর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

বেতাগী পৌরসভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির বলেন, পৌরসভার ভাঙনকবলিত স্থানগুলোতে সাময়িকভাবে জিও ব্যাগের বস্তা ফেলে সংস্কার করা হয়েছিল, তবে বর্তমানে ওই বাঁধও ধসে যাচ্ছে। ভাঙনরোধ করতে একনেকের সভায় পাশ হওয়া প্রকল্পটির কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন একান্ত কাম্য।

 

এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে ভাঙন এলাকা। আমরা জানতে পেরেছি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এ কারণেই প্রায় অর্ধ কোটি টাকার জিও ব্যাগ প্রকল্পেও কোনো কাজ হয়নি। অনেক জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। তবে বর্ষা মৌশুম শেষ হলেই খুব শিগগির একনেকের সভায় পাশ হওয়া প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজটি শুরু হবে।

 

বেতাগী সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিপুল সিকদার বলেন, বিষখালি নদীর কোনো চরাঞ্চলে আমরা বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেইনি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে শিগগিরই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করব এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

 

ভোরের আকাশ/নি