ইমরান খান: আগামি ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে। ইতিমধ্যে অনলাইন ও অফলাইনে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেবে কি না, কিংবা পল্টন ছাড়া অন্য কোথাও সমাবেশ হবে কি না স্পস্ট না হলেও ওই দিনকে ঘিরে নিরাপত্তা কাজটি ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছে। প্রস্তুত করা হয়েছে পুলিশের অন্তত ৫০ হাজার সদস্য। মাঠে থাকবে ঢাকায় র্যাবের ৫ টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরাও।
আকাশে র্যাবের হেলিকাপ্টার টহল থাকবে। এর পাশাপাশি একদিন আগে ২৭ তারিখ থেকেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের পাশাপাশি ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা দ্বায়িত্বপালন শুরু করবেন। অনাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে মোতায়েন হবে বিজিবিও। বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে যে কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঠেকাতে নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে যা যা করা প্রয়োজন পুলিশ তাই করবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
পুলিশ জানায়, ২৮ তারিখ সমাবেশের দিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন হবে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই দিন ঢাকায় পোশাকে সাদাপোশাকে অন্তত ৫০ হাজার পুলিশের সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও অনাঙ্খিত পরিস্থিতি সষ্টি হলে সেটি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত এপিসি (আর্মড পার্সেনাল ক্যারিয়ার), জলকামানসহ পুলিশের অন্যান্য সরঞ্জামাদি মোতায়েন থাকবে। ডিএমপির সোয়াট টিমও থাকবে মাঠে।
জানা গেছে, ওই দিন ঢাকার গুলশান বনানী অর্থাৎ কূটনৈতিক এলাকায়ও থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা। সেখানে আর্মড পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির পুলিশও মোতায়েন থাকবে। এর বাইরে পল্টন, প্রেসক্লাব, গুলিস্থান, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল কেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে। মালিবাগ রেলগেট থেকে শুরু করে মৌচাক হয়ে পল্টন, রাজারবাগ, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল। এছাড়াও মালিবাগ রেলগেট থেকে মগবাজার হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব হয়ে গুলিস্থান। অর্থাৎ এই এলাকাগুলো নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় থাকবে। ২৭ তারিখ থেকে বিকেল থেকেই মূলত মোতায়েন হওয়া শুরু হবে। দিন-রাত বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুরু হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঢাকা মহানগরীতে বসবাস করা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিধান করাই ডিএমপির কাজ। বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে কোন ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটবে এটা পুলিশ আশা করেনা। তবে নিরাপত্তা বিধানের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তাই করবে।
তিনি বলেন, বিএনপি জানিয়েছে তারা পল্টনে সমাবেশ করবে। তবে ডিএমপি এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানায়নি। গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি বলেন, ২৮ তারিখ পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ নিরাপত্তার দ্বায়িত্বে থাকবে। এক কথায় ঢাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। আমরা আমাদের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে ফেলেছি। ২৮ তারিখ সমাবেশ ঘিরে অনলাইনে যে ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে সেই বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। ব্যবস্থাও নেয়া হবে।
এদিকে ২৭ তারিখ বিকেল থেকে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদস্য মোতায়েন করা হবে। আনসার ব্যাটালিয়নের অন্তত ৫ হাজার সদস্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও এলাকা ঘিরে অবস্থান নিয়ে থাকবেন।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ২৮ তারিখে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় র্যাবও মাঠে থাকবে। ওই দিনকে ঘিরে কেউ যাতে নাশকতা ঘটাতে না পারে তার জন্য র্যাবের ৫ টি ব্যাটায়িনের সদস্যরা কাজ করবেন। এছাড়াও র্যাবের হেলিকাপ্টার দিয়েও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।
র্যাবের একটি সূত্র জানায়, র্যাবের অন্তত ৫ হাজার সদস্য পোশাকে ও সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে।
বিজিবির সূত্র জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজিবিও প্রস্তুত থাকবে। অনাঙ্খিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে অন্তত ২০ প্লাটুনের মত সদস্য প্রস্তুত থাকবে। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বরও একই সংখ্যক প্লাটুন প্রস্তুত ছিল।
রাজধানীর বিভিন্ন থানা পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান থানা এলাকাগুলোকে কঠোর নজরদারীর মধ্যে রাখা হয়েছে। পোশাকে সাদাপোশাকে নজরদারী চলছে। ২৮ অক্টোবর ঘিরে নাশকতার ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না তা নজরদারী করা হচ্ছে।
এছাড়াও গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি রয়েছে এমন নেতাদেরও গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ঢাকা ও এর পাশপাশের জেলাগুলোতেও পুলিশের বিশেষ নজরদারী পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তায় চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি ও নজরদারী করছে পুলিশ।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জেলা পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নাশকতা এড়াতে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, থানার কর্মকর্তাদের সতর্ক করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অনাঙ্খিত পরিস্থিতি রোধে আমরা সতর্ক রয়েছি।
ভোরের আকাশ/নি