logo
আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ ১০:৪১
দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ঘোড়ার খামার ময়মনসিংহে
মীর বাবুল, ময়মনসিংহ

দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ঘোড়ার খামার ময়মনসিংহে

সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি কোকিল গ্রামের ‘সঞ্জু হর্স ফার্ম’

দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ঘোড়ার খামার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি কোকিল গ্রামে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে বিস্ময় সৃষ্টির পাশাপাশি হাতছাঁনি দিচ্ছে বাণিজ্যিক উৎপাদনে সম্ভাবনার নবদিগন্ত। অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করা উচ্চশিক্ষিত তরুন যুবক মো. শরফুল ইসলাম সঞ্জু এ ঘোড়ার খামারের মালিক। তিনি স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নূরুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে সিন্দি, মারোয়ারী ও নোকড়া জাতের চোখ জুড়ানো ৭টি ঘোড়া। প্রতিটি ঘোড়ার মূল্য ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।

 

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই ঘোড়দৌড় বা রেইস খেলা খুব ভালো লাগত সঞ্জুর। আর এ কারণেই ২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে মায়ের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে ১টি ঘোড়া কিনে শুরু করেন রেইস খেলা। এতে তিনি সফলও হন। দেশের নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত রেইস খেলায় অংশ নিয়ে তিনি অর্জন করেছেন পুরস্কার ও অর্থ। তবে কিছুদিন পর হঠাৎ তার সেই প্রিয় ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এতে সঞ্জু মর্মাহত হলেও স্বপ্ন তাকে আরো বড় কিছু করার আত্মবিশ্বাস যোগায়।

 

এরপর ২০২১ সালে ভারতের রাজস্থান ও পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে আবারো সিন্দি, মারোয়ারী ও নোকড়া জাতের কয়েকটি ঘোড়া কিনে শুরু করেন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘সঞ্জু হর্স ফার্ম’ নামে দেশের প্রথম ঘোড়ার খামার। বর্তমানে ওই খামারে ২ জন শ্রমিক নিয়মিত এই ঘোড়াগুলির পরির্চযা করছেন। প্রতিদিনই এলাকাবাসী ছাড়াও দেশের নানাপ্রান্ত থেকে লোকজন আসছে এ ঘোড়ার খামার দেখতে এবং কিনতে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও আনসার একাডেমিতে এই খামারের ঘোড়া বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও শখের বশে সমাজের উচ্চবিত্তরাও কিনে নিচ্ছেন এসব ঘোড়া। এতে সে বেশ লাভবান বলেও জানান সঞ্জু।

 

সরেজমিনে এই ঘোড়ার খামারে গিয়ে কথা হয় খামারি শরীফুল ইসলাম সঞ্জুর সঙ্গে। তিনি জানান, ঘোড়া পালনের কারণে প্রথম দিকে এলাকার মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত, টিপ্পুনি কাটত। কিন্তু এখন অনেক দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে এই খামার দেখতে। তা দেখে গ্রামের মানুষরা অবাক হয়, মুগ্ধও হয়।

 

ঘোড়া প্রভুভক্ত প্রাণী উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, ঘোড়াকে আপনি যা শেখাবেন, তাই সে শিখবে। ফলে এই ঘোড়া নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু দেশে ঘোড়ার চাহিদা থাকলেও নেই খামার। ফলে প্রতি বছর বিদেশ থেকে ঘোড়া আমদানি করতে হয়। আর এ কারণেই আমি এই খামারেই ঘোড়া উৎপাদন করতে চাই। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করাও সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগীতা অপরিহার্য।

 

এ সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় ঘোড়া দৌঁড় ছিল গ্রাম বাংলার ঐহিত্যের খেলা। কিন্তু বর্তমানে রেইস করার জন্য ভালো ঘোড়া দেশে পাওয়া যায় না। অথচ জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান যে রেসকোর্স মাঠে ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই মাঠটি ছিল ঘোড়দৌড় বা রেইস খেলার জন্য। তবে ১৯৪৯ সালে এই মাঠে ঘোড়দৌড় বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকেই কদর কমতে শুরু করে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতার।

 

এতে সুস্থ বিনোদনের সুযোগ কমে যাওয়ায় মাদকসক্ত হয়ে পড়ছে গ্রামের তরুনরাও। ফলে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সরকার চাইলে আবারো জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশে ঘোড়দৌড় আয়োজন করা সম্ভব। এছাড়া ঘোড়াদৌড় আন্তর্জাতিক মানের একটি খেলা। সারা বিশ্বে এ খেলার কদর রয়েছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানেও ঘোড়ার রেইস বা রাউডিং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলেও প্রমাণিত।

 

খামারের শ্রমিক রোকনুজ্জামান বলেন, ছোলা বুট, ধানের কুড়া, খড় ও সবুজ ঘাস ঘোড়ার প্রধান খাবার। ফলে সময় মেনে খাবার দিলে ঘোড়া পরিচর্যায় কোন সমস্যা হয় না।

 

এ সময় কথা হয় খামার দেখতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা মো. সাদেক আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, দেশের অনেক স্থান থেকে মানুষ এই খামার দেখতে আসে। তবে এই খামারে আসা-যাওয়ার সড়কটির বেহাল দশা। সংস্কারের অভাবে এই সড়কটিতে চলাচলে অনেক কষ্ট। ফলে সড়কটির সংস্কার এখন এলাকাবাসীর দাবিতে পরিণত হয়েছে।

 

জানতে চাইলে জেলার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাহেলা পারভীন রুমা বলেন, ওই ঘোড়ার খামারের সঙ্গে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সেবা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। তবে প্রাণিসম্পদের নিবন্ধনে ঘোড়ার বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় বন ও পরিবেশ বিভাগ নিবন্ধন বিষয়টি দেখবে বলে মনে হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি