সরকারি, বেসরকারি ও কৃষক পর্যায়ে ৩ স্তরেই বেড়েছে আলুর বীজের দাম। এবার প্রতি কেজি আলুর বীজ সরকারিভাবে ৪৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সার, কীটনাশক, হালচাষ ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায়, প্রতি হেক্টরে আলু উৎপাদনে খরচ বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর আগে সরকারি যেসব কোম্পানি বীজ আলু বিক্রি করেছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, এবার তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
অপরদিকে দিনাজপুর জেলায় এবার চাহিদার মাত্রা ৪ শতাংশ সরকারি আলুর বীজ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তাও আবার আনতে হবে অন্য জেলা থেকে। এতে বাড়বে পরিবহন খরচ। এ নিয়ে ডিলারদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা এক জেলার ডিলারকে আরেক জেলায় বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
দিনাজপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরে ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়ে থাকে। এই ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ৭৫ হাজার ৭৫ টন বীজ আলুর প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৮৬ টন। যা চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশ। এ ছাড়া কেজিপ্রতি জাত ভেদে এর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত।
জানা যায়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় এই ৩ জেলায় তিনটি হিমাগার রয়েছে বীজ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দিনাজপুর বিএডিসির আঞ্চলিক অফিসের অধীনে। এর মধ্যে দিনাজপুরের নশিপুর হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১১০০ টন, ঠাকুরগাঁও হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১০০০ টন ও পঞ্চগড় হিমাগারের ধারণক্ষমতা ২০০০ টন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের আলু বীজ বিভাগ সারা দেশের বীজ আলু সমন্বয় করে জেলাওয়ারি বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সেই হিসাবে বিএডিসি বীজ আলু ডিলারদের মাধ্যমে বিপণন করে থাকে।
কৃষি অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দিনাজপুর জেলায় সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে চাহিদার মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বীজ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ হয়ে থাকে। বাকি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বীজ আলু কৃষকরা নিজেরাই সংরক্ষণ করে রাখেন। গত বছর সরকারিভাবে আলুর বীজ বিক্রি করা হয়েছিল ডিলার পর্যায়ে ২৭-৩০ টাকা কেজি। কৃষক পর্যায়ে ২৮-৩৩ টাকা ৫০ পয়সা কেজি। তবে চলতি মৌসুমে সেই আলুর সরকারিভাবে বিক্রয় মূল্য দেয়া হয়েছে ডিলার পর্যায়ে ৪৭-৫২ টাকা কেজি। কৃষক পর্যায়ে ৪৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজি।
দিনাজপুর বিএডিসির বীজ বিপণন বিভাগের উপপরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, এবার আলুর দাম বেশি। এর থেকে কম দামে থাকলে এটি খাদ্য হিসেবে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে করে বীজ আলু সংকট পড়ার সম্ভাবনাও থাকে।
সদর উপজেলার ৯নং আসকরপুর ইউনিয়ন জাগির পাড়া গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল্লাহ জানান, তিনি এবার ১ একর জমিতে আলু চাষ করবেন। কিন্তু সরকারি বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাও আবার গতবারের চেয়ে দাম অনেক বেশি। বাধ্য হয়ে চড়া দামে বাইরে থেকে বীজ আলু কিনেছেন।
এদিকে ডিলাররা জানান, জেলায় যে ৩ হাজার ৮৬ টন আলুবীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা দিনাজপুরের নশিপুর হিমাগার থেকে উত্তোলন করা যাবে না। দিনাজপুরের ডিলারদের অন্য জেলার বিএডিসির হিমাগার থেকে বীজ আলু উত্তোলন করে আনতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে ডিলাররা লোকসানের মধ্যে পড়তে পারেন। কারণ ডিলারদের বিক্রয় মূল্য সরকার নির্ধারিত। আবার লোকসান থেকে বাঁচতে কোনো কোনো ডিলার বেশি দামে বীজ আলু বিক্রি করতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারেন। ডিলারদের দাবি তাদের দিনাজপুরের নশিপুর হিমাগার থেকে বীজ আলু উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হোক।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, আমরা পরিকল্পিতভাবে আলুচাষের পর সেই জমিতে কৃষক যাতে সরিষা চাষ করতে পারে সেজন্য আগাম জাতের আলুচাষে কৃষককে উৎসাহিত করেছিলাম। সফলও হয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবার দিনাজপুরে আগাম আলু চাষ কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যাপকহারে আলু বীজ বপন শুরু হবে।
ভোরের আকাশ/নি