logo
আপডেট : ১ নভেম্বর, ২০২৩ ১৪:৪৮
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু
আবারো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ফিরে গেল মিয়ানমার প্রতিনিধিদল
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

আবারো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ফিরে গেল মিয়ানমার প্রতিনিধিদল

আবারো ভেঙে গেল প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের আলোচনা। নানা শর্তের কারণে তারা স্বদেশে ফেরাতে আস্থা অর্জন করতে পারেনি রোহিঙ্গাদের। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই মঙ্গলবার বিকেলে ফিরে গেছে মিয়ানমারের ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

 

বুধবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলটি আবারো টেকনাফ এসেছিল বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

 

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদীর জালিয়াপাড়া জেটিঘাট দিয়ে পৌঁছায় মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের এ প্রতিনিধি দলটি। এরপর বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলটি ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে নদী নিবাস রেস্ট হাউস এবং গণপূর্ত বিভাগের রেস্ট হাউসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আলোচনা শেষে প্রতিনিধিদলটি মিয়ানমার ফিরে গেছে।

 

মিয়ানমারের ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের দিনব্যাপী আলোচনা শেষে মঙ্গলবার বিকেলে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমারবিষয়ক সেলের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার কাজ করছে। সরকার সবসময় রোহিঙ্গা সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে।

 

রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে নিজেদের জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে, সেই বিষয়ের গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রত্যাবাসন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটা চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যায়।’

 

মাইনুল কবির বলেন, ‘এর আগে চলতি বছর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল ২ বার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করতে এসেছিলেন। এ সময় তারা (মিয়ানমার প্রতিনিধি) রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে (মিয়ানমার) যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। মঙ্গলবারও তারা সুনির্দিষ্ট করে বলেছে, কোন গ্রামে কে যাবে; কীভাবে যাবে। এই আলোচনাটা আমাদের সঙ্গে অব্যাহত আছে, অব্যাহত থাকবে।’ তবে রোহিঙ্গারা কখন স্বদেশে ফিরে যাবেন সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে মন্তব্য করেন মাইনুল কবির।

 

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা শুধু এখান (বাংলাদেশ) থেকে যাওয়াই নয়, যাওয়ার পরও যেন তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে এবং প্রত্যাবাসনটাও যেন টেকসই ও স্থায়ী হয়; সে জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’ প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের সংশয় ও অবিশ্বাস দূর করতে মিয়ানমারের সঙ্গে সবধরনের আলোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কর্মকর্তা। আর দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন তিনি।

 

আলোচনার জন্য আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে নিজ ভিটেমাটি ও নাগরিকত্ব দিলেই স্বদেশে ফিরবেন তারা।

 

ব্রিফিংয়ে শরণার্থী কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিনিধি দলটি ২ দলে বিভক্ত হয়ে ১৮০ জন রোহিঙ্গা পরিবার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। মূলত প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের সম্মতি আদায়ে এই আলোচনা চলছে।’

 

শরণার্থী কমিশনার বলেন, ‘জল ও স্থলপথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দুই দেশের চুক্তিতে উল্লেখ্য রয়েছে। আমরা জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আশা করি, ২ পক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে। অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত।’ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অবশ্যই মর্যাদাপূর্ণ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় হবে। এই জন্য বাংলাদেশ সরকার সবসময় কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান শরণার্থী কমিশনার।

 

এর আগে চলতি বছর ২ বার মিয়ানমার প্রতিনিধিদল আসে টেকনাফে। ১৫ মার্চ প্রথম দফায় এবং ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে মিয়ানমার প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। এরইমধ্যে ৫ মে বাংলাদেশের ৭ সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন।

 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখের বেশি। কিন্তু গত ৬ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের নামে সময়ক্ষেপণ করে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল করে তুলছেন। অপরদিকে রোহিঙ্গাদের অধিক জন্মহার ও বাল্যবিয়ের ফলে জনসংখ্যা গাণিতিকহারে বাড়ছে।

 

ফলে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। দু’দেশের চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত টেকসই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা প্রয়োজন।

 

ভোরের আকাশ/নি