শুরু হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি মৌসুম। তাই ব্যস্ততা দেখা দিয়েছে উপক‚লের জেলে-মহাজনদের মাঝে। সাগরে যেতে যে যার মতো প্রস্তুত করেছেন জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলার। অনেকে ইতোমধ্যে চলে এসেছেন মোংলা নদী ও পশুর নদীতে। বনবিভাগের কাছ থেকে পাসপারমিট নিয়ে এসব জেলেরা রওনা হয়েছেন বঙ্গোপসাগর পাড়ের সুন্দরবনের দুবলার চরে। ঝড়-জলোচ্ছাসের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই শুক্রবার থেকে দুবলার চরে উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে সুন্দরবন উপকূলের হাজার হাজার জেলে।

বনবিভাগ জানায়, শুক্রবার থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুঁটকি মৌসুম। এ শুঁটকি মৌসুম চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা ৫ মাস সেখানে থাকতে হবে জেলেদের। সাগর পাড়ে গড়তে হবে জেলেদের অস্থায়ী থাকার ঘর, মাছ শুকানো চাতাল ও মাচা। সেসব তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে না সুন্দরবনের কোনো গাছপালা। তাই বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দুবলার চরের উদ্দেশ্যে যাওয়া সকল জেলেদেরকে সঙ্গে নিয়েই যেতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী।

সকল প্রস্তুতি শেষে বনবিভাগের কাছ থেকে পাসপারমিট (অনুমতিপত্র) নিয়ে শুক্রবার থেকেই জেলেরা দলে দলে রওনা হয়েছে দুবলার চরে। দুবলারচরগামী জেলে কাকন শেখ, ইলিয়াছ মোল্লা, ওমর আলী বলেন, দুবলার চরে শুঁটকি তৈরিতে যেতে তারা তাদের জাল, নৌকা প্রস্তুত করেছেন। আর চরে ঘর ও মাচা বাঁধতে গাছ, কাঠ সঙ্গে নিয়ে গেছেন। সঙ্গে নিয়ে গেছেন রান্না করার জন্য গ্যাসও। কারণ বনের গাছপালা কাটাতে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

দুবলার চরের দোকান ব্যবসায়ী মো. ফারুক বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেরা মোংলা নদী ও পশুর নদীতে অবস্থান করছিল। তারা তাদের ট্রলারে প্রয়োজনীয় বাজারসহ মালামাল বোঝাই করেছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর অর্থাৎ শুক্রবার থেকে এ জেলেরা দুবলায় যাত্রা শুরু করে।

তিনি আরো বলেন, চরে আমার নিজের মুদি, তেলসহ বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবসা রয়েছে। মৌসুম শেষে জেলে ও ব্যবসায়ীরা ফিরে আসবেন নিজ এলাকায়।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (সদর) রানা দেব বলেন, শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১০ হাজার জেলে সমবেত হয় দুবলার চরে। দুবলার চরের ওই সকল জেলেরা প্রায় দেড় হাজার ট্রলার নিয়ে মাছ ধরবেন গভীর সাগরে। সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুঁটকি করবেন তারা। এ বছর চরে জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য ১,১০৮টি জেলে ঘর ও ৭৮টি ডিপো স্থাপনের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। গত শুঁটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৬ কোটি টাকা। আর এবার তার টার্গেট ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা।

ঝড়-জলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশংকা মাথা নিয়েই পরিবার পরিজন রেখে ৫মাস ধরে দুবলার চরে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত থাকবেন হাজার হাজার জেলে। আর মৌসুম শেষেই লাভ-লোকসানে হিসাব কষেই ফের বাড়িতে ফিরবেন এসব জেলে-মহাজনরা।

ভোরের আকাশ/নি