ঘরের সামনে ফুলগাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। চারদিকে শোভা পাচ্ছে হরেক রকম শাকসবজি ও ফলের গাছ। আধাপাকা ঘরের ভেতরে রোদের আলোয় খাবার খাচ্ছেন বৃদ্ধ দম্পতি। নেই শুধু ঘরের চালা।
সরেজমিনে দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার হিজলাকর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শুধু এ দম্পতি নন, আশ্রয়ণের অন্তত ২০ পরিবারের ঘরের চাল নেই। প্রায় ৬ বছর অতিবাহিত হলেও সংস্কার হয়নি। ফলে কেউ কেউ অন্যত্র চলে গেছেন। কেউ ভাঙা ঘরের পাশে বিকল্প টিনের খুপরি বানিয়ে বাস করছেন। কেউ ভাঙা ঘরের বারান্দায় থাকছেন।
এ সময় শাজাহান আলী ও মনোয়ারা খাতুন জানান, দু’বছর আগে আশ্রয়ণে এসেছেন তারা। আশ্রয়ণের সাধারণ সম্পাদক আফিল উদ্দিনসহ কয়েকজনকে ২ দফায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা দিয়ে ৪ টি ভাঙা ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন তারা। ঘরের চাল না থাকায় বারান্দায় বেড়া দিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। আশ্রয়ণের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, সরকারি লোকজন প্রতি বছর এসে ঘুরে যান, ছবি তুলে নিয়ে যান। সংস্কারের আশ্বাস দেন। কিন্তু সংস্কার হয় না। তারা ঘরগুলো মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
জানা গেছে, গড়াই নদীর কুল ঘেঁষে অবস্থিত কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের হিজলাকর আশ্রয়ণ প্রকল্প। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ বাস্তবায়ন সংস্থার তত্ত্বাবধানে ৮০ পরিবারের জন্য ১৬ টিনশেড সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু হস্তান্তরের ৬ মাসের মাথায় ঝড়ে অন্তত ২০টি ঘরের টিনের চাল উড়ে যায়।
বাসিন্দা কলি খাতুন বলেন, ‘ঘর হস্তান্তরের পাঁচ-ছয় মাসের মাথায় হঠাৎ ঝড়ে ঘরের চাল উড়ে যায়। সরকারি ঘরের পাশে টিনের ছাপড়া করে বাস করছি। ভাঙা ঘরে রান্নাবান্না করি।’ আরেক বাসিন্দা বাহাদুর মোল্লা বলেন, ‘শরীরের ওপর দিয়েই ঝড়বৃষ্টি চলে যাচ্ছে। কেউ তা দেখে না। স্যারেরা বারবার আসে বলে ঘর মেরামত করা হবে। কিন্তু ছয় বছরেও তা হয়নি। আমরা ঘরগুলো দ্রুত মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।’
অভিযোগ অস্বীকার করেন আশ্রয়ণের সাধারণ সম্পাদক আফিল উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, ঘর দিয়ে কারো কাছ থেকে টাকা নেননি। মানবিক কারণে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে তিনি থাকার জায়গা করে দিয়েছেন।
সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, উদ্বোধনের কয়েক মাস পর ঝড়ে উড়ে গেছে ২০টি ঘরের চাল। সংস্কারের অভাবে অন্য ঘরগুলোতে বৃষ্টির পানি পড়ে। তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
যদুবয়রা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান জানান, তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো দেখেছেন। বাসিন্দারা খুব কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন। সংস্কারের জন্য ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
নির্মাণের পর সংস্কারের কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ইউএনও বিতান কুমার মন্ডল। তিনি বলেন, আশ্রয়ণের ঘরগুলো মেরামতের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি