logo
আপডেট : ৫ নভেম্বর, ২০২৩ ১১:০০
ইটভাটা ভেঙে ড্রাগন চাষ
নড়াইল প্রতিনিধি

ইটভাটা ভেঙে ড্রাগন চাষ

কালিয়ার মাউলি ইউনিয়নে পলাশের ড্রাগন ফলের বাগান

নিজেদের ইটভাটা থেকে পরিবেশের ক্ষতি মেনে নিতে পারেননি কলেজ শিক্ষক মরফুদুল হাসান পলাশ। তাই পারিবারিক ইটভাটা ভেঙে তিনি গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফলের বাগান। ইটভাটার জমিসহ ২৩ একর জমিতে গড়ে উঠেছে এ বাগান। এখান থেকে গত দেড় বছরে তিনি ফল বিক্রি করে পৌনে ১ কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন। বাগানটির অবস্থান কালিয়ার নবগঙ্গা নদীর পাড়ে মাউলি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মাঠে। বাগানে রয়েছে ৫৬ হাজার গাছ।

 

দুই বছর আগেও এই ইটভাটার চিমনি দিয়ে ধোঁয়া উড়তে দেখা যেত। তবে এখন সেই জমির ওপরে বাতাসে দোল খাচ্ছে ড্রাগন গাছের সবুজ ডগা। বাগানে রয়েছে রেড ভেলভেট, আমেরিকান বিউটি, ইসরায়েল ইভলো, ভিয়েতনাম রেড, ভিয়েতনাম হোয়াইট ও পলোরা জাতের ড্রাগন গাছ। এগুলো সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ১৩ হাজার ৭৫০টি কংক্রিটের পিলার।

 

কালিয়ার মুন্সি মানিক মিয়া কলেজের শিক্ষক পলাশ বলেন, দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তিনি ড্রাগন বাগান তৈরির কাজ শুরু করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় প্রথমে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার পিস ও চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ৪ হাজার পিস চারা সংগ্রহ করে বাগানে রোপণ করেন। পরে যেসব চারা রোপণ করা হয়েছে, তা সবই নিজের বাগানের।

 

প্রায় ১ বছর ধরে তিনি ফল বিক্রি করে আসছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কয়েক কিস্তিতে ৮০ লক্ষাধিক টাকার ফল বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তার বাগানে ফুল ও ফল রয়েছে। বাগানটিতে প্রতিদিন ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে থাকেন। তিনি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে এই ফলের চাষ করছেন। কোনো ওষুধ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করেন না। শুধু বছরে এক থেকে দু’বার সার প্রয়োগ করেন। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ফল সংগ্রহ করা হয়। ফলের আকারভেদে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।

 

পলাশের দাবি, খুলনা বিভাগের মধ্যে তার ড্রাগন বাগানটিই সবচেয়ে বড়। বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন। ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়ে অনেকেই চারা কিনে নিচ্ছেন এবং চাষের প্রাথমিক ধারণাও তার কাছ থেকে শিখে নিচ্ছেন। এ ছাড়া স্থানীয়রাও তার কাছ থেকে চারা নিয়ে এরই মধ্যে ছোটখাটো বাগান তৈরি করে ফেলেছেন।

 

বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত শ্রমিক আবদুল লতিফ বলেন, এই বাগানের শুরু থেকেই তিনি কাজ করেন। সহজ পদ্ধতিতে এই বাগান করা যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই গাছ বেড়ে ওঠে এবং ফুল, ফল ও চারা গজাতে শুরু করে। তবে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয়, যাতে পোকামাকড় গাছে আক্রমণ করতে না পারে।

 

কালিয়ার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা এস এম ফেরদৌস বলেন, বাগানটি তিনি পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। চারা রোপণের পর অল্প সময়ে বাগানে ফল ধরতে শুরু করে এবং ফল কম নষ্ট হয়। তাই ড্রাগনের চাষ বেশ লাভজনক। যে কেউ ড্রাগন ফলের বাগান করতে চাইলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

 

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, নড়াইলে ছোট-বড় ১৩টি ড্রাগন ফলের বাগান রয়েছে। এই জেলার মাটিতে ড্রাগন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ইটভাটা ভেঙে কলেজ শিক্ষক পলাশ যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে।

 

ভোরের আকাশ/নি