শিপংকর শীল: বিএনপি-জামায়াতের দ্বিতীয় দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হয়েছে। অবরোধের প্রথম দিন রোববার প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় প্রায় স্বাভাবিক। অন্যান্য দিনের মতোই নির্ধারিত সময়ে অফিসে এসেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে প্রবেশে রয়েছে কিছুটা নিরাপত্তার কড়াকড়ি। সকাল থেকে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ঘুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা গেছে।
রোববার দুপুরের মধ্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রাণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ভ‚মি মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক উপস্থিতি দেখা গেছে।
সচিবালয়ের এক নম্বর এবং দুই নম্বর গেটটি খোলা রয়েছে। তবে জিরো পয়েন্টের দিকে সচিবালয়ের পূর্ব পাশের গেটটি বন্ধ রয়েছে। এক ও দুই নম্বর গেটে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে তৎপর দেখা গেছে। সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাভাবিক চলাফেরা দেখা গেছে। এক ও দুই নম্বর গেটের মাঝখানে অভ্যর্থনা কক্ষে দর্শনার্থীদের দেখা গেছে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করতে। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় উপস্থিতি তুলনামূলক কম।
সচিবালয়ে গাড়ি রাখার স্থানগুলো অন্যান্য দিনের মতোই গাড়িতে পূর্ণ। কর্মচারীদের বহনকারী কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের বাসগুলোও সকাল ৯টার মধ্যে সচিবালয় গেটে উপস্থিত হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ৬ নম্বর ভবনের একটি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করে জানান, আজ আমাদের মন্ত্রণালয়ের সবাই স্বাভাবিক অন্যান্য দিনের মতো উপস্থিত রয়েছেন। দু-একজন আলাদা করে ছুটি নিলে সেটি ভিন্ন বিষয়। এমন ছুটি সব সময় কেউ না কেউ নিয়ে থাকেন।
সরেজমিন দেখা যায়, সচিবালয়ে সব দর্শনার্থীদের কড়াকড়িভাবে চেক করে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। তবে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল কম। এছাড়া অবরোধের মধ্যে তেমন প্রভাব দেখা যায়নি সচিবালয়ের আশপাশের সড়কে, যান চলাচল স্বাভাবিক।
সচিবালয় ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কর্মকর্তারা নিদিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। এদিন সচিবালয়ের আশপাশের রোডে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ছিল এদিকে অবরোধ চলায় সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। সচিবালয়ের লিফটগুলোর সামনেও ভিড় দেখা যায়নি। এছাড়া সচিবালয়ে গাড়ি রাখার স্থানগুলো ছিল পরিপূর্ণ।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, আজ থেকে দ্বিতীয় দফায় বিএনপি-জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ শুরু হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোথায় অবরোধ, সব কিছুতো ঠিকই আছে। তবে জন মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাস্তায় যানবাহন চলছে, বেচা কেনা শুরু হয়েছে, সাধারণ মানুষ যে যার কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশের একজন সদস্য জানান, অন্যান্য দিনের মতো আজ সকাল থেকেই আমরা তৎপর আছি। অযথা সচিবালয়ের সামনে ভিড় করতে দেয়া হচ্ছে না। সন্দেহ চলে সার্চ করা হচ্ছে। কার্ড দেখে দেখে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন চলছে। সকালে যানবাহন কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে যানবাহন। সকাল থেকে দেখা যায় দিকে দেখা যায় ১০-১২ জায়গায় বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। অন্যান্য দিনের মতো ব্যবসায়ীরা সকালে দোকানপাট না খুললেও বেলা বাড়ালে দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন। তবে অবরোধের মধ্যে যানবাহন চলাচল করায় মানুষ বিনাবাধায় নিজ নিজ কর্মস্থলে যাচ্ছেন।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা তিন দিন দেশব্যাপী সড়ক-রেল-নৌপথ, রাজপথসহ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। তার আগে ২৯ অক্টোবর (রোববার) সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের পর ওইদিন সন্ধ্যায় টানা তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি দেয় বিএনপি, সমমনা দল ও জোট।
ভোরের আকাশ/নি