ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু।
রোববার (৫ নভেম্বর) রাত ৯টার পর এ ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম। এতে অধ্যক্ষ সাজুকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৩১৪ ভোট আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কলারছড়ি প্রতীকের জিয়াউল হক মৃধা পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৫৫৭ ভোট।
২৮ হাজার ৭৫৭ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন অধ্যক্ষ সাজু। বাকি ৩ প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ লাঙল প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ১৮৬ ভোট, জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল গোলাপ ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫১ ভোট এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুর রাজ্জাক আম প্রতীকে ৭৩৯ পেয়েছেন।
এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ থাকায় ভোট বাতিল হয়েছে ১৩০৮টি। এর আগে ৫০ বছর আসনটিতে জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। আর ভোটের লড়াইয়ে নৌকা প্রতীক ছিল না ২২ বছর। রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। একাদশ সংসদের মেয়াদকালে দুটি উপ-নির্বাচনসহ ৩টি নির্বাচন হয় এখানে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁঞা।
পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে ১ ফেব্রুয়ারি এই আসনে উপ-নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের সমর্থনে আবারো জয়ী হন উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁঞা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুতে ৪ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে আবারও উপনির্বাচনের তফসিল দেয় নির্বাচন কমিশন। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ৫ জন প্রার্থী অংশ নেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি তাহের উদ্দিন ঠাকুর। এরপর সরাইল-আশুগঞ্জ নিয়ে গঠিত এ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে কেউ জয়লাভ করতে পারেননি। তাহের উদ্দিন ঠাকুরের পর ১৯৭৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা। পরবর্তীতে একই বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিএনপির প্রার্থী ফরিদুল হুদা ধানের শীষ প্রতীকে জয়লাভ করেন।
১৯৮৬ ও ৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হুমায়ুন কবির লাঙল প্রতীকে জয়লাভ করেন। বিএনপিতে যোগদান করলে ১৯৯১, ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ১২ জুন নির্বাচনে উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা জয়লাভ করেন। ২০০১ সালে চার দলীয় জোট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মুফতি ফজলুল হক আমিনী জয়লাভ করেন। ২০০৮ ও ২০১৩ সালের নির্বাচনে মহাজোট থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা জয় পান।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের বিএনপির প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঞা আবারো বিজয়ী হন। এরপর তিনি জাতীয় সংসদ ও বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কলারছড়ি প্রতীকে উকিল আব্দুস সাত্তার ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুতে রোববার উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল চৌধুরী মন্টু ভোরের আকাশকে বলেন, 'দীর্ঘ ৫০ বছর পর এখানে নৌকার বিজয় হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে আস্থা রেখেছেন।'
ভোরের আকাশ/নি