logo
আপডেট : ৭ নভেম্বর, ২০২৩ ১৫:০৫
লাগাতার অবরোধ
ফেনীতে আয় কমেছে শ্রমজীবী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের
ফেনী প্রতিনিধি

ফেনীতে আয় কমেছে শ্রমজীবী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের

অবরোধের কারণে অলস সময় পার করছেন শ্রমজীবীরা

একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে লাগাতার অবরোধ-হরতালের কারণে আর্থিক সংকটে পড়ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যানবাহনের চালক ও শ্রমজীবীরা। সাধারণ মানুষের দাবি, রাজনৈতিক দলগুলোর রেষারেষিতে প্রতিবারই তাদের ক্ষতি হয়। এমন সমস্যার সমাধান চান তারা।

 

ফেনী শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের দোকানের আয় থেকেই সংসার চলে। বেচাকেনা না হলে না খেয়ে থাকতে হবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। জীবিকার তাগিদে পথে নেমেও অবরোধের কারণে প্রায় খালি হাতেই ঘরে ফিরতে হচ্ছে তাদের। রাজনৈতিক টানাপড়েনের জেরে পুঁজি হারানোর আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। এমন পরিস্থিতিতে দেশে কোনো রকম হরতাল বা অবরোধ না হোক সেই প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের।

 

শ্রমজীবীদের ভাষ্য, দিনমজুরের কাজ করে প্রতিদিনের খাবার জোগান তারা। কাজ বন্ধ থাকলে খাবার কেনার জন্য চিন্তায় পড়তে হয় তাদের। সহিংসতা বড় কিংবা ছোট যাই হোক দিনশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ মানুষ। তাই এসব রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করার আহব্বান তাদের।

 

শফি উল্লাহ নামের ফেনী শহরের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের দৈনিক যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। অবরোধের কারণে মানুষ ঘর থেকে কম বের হয়। এতে আমাদের বেচাকেনাও হয় না ঠিকমতো। নিরুপায় হয়ে খালি হাতে ঘরে ফিরতে হয়।

 

আবুল হোসেন নামের এক দিনমজুর বলেন, কাজ না মিললে সেদিনের আয় বন্ধ। সকালে বাজারে দাঁড়িয়েছি কাজের জন্য কিন্তু কাজ মেলেনি। বাজারে জিনিসপত্রের অনেক দাম, আবার কাজও পাচ্ছি না। সারাদিন অলসভাবে কাটাতে হবে। দু’বেলা ভাত খাওয়ারও উপায় থাকে না উপার্জন বন্ধ হলে।

 

রিকশাচালক জাহাঙ্গীর বলেন, দিনের অর্ধেক সময়ে মাত্র ২০০ টাকা আয় হয়েছে, যেখানে আগে আয় হতো ৪০০-৫০০ টাকা। এখন অবরোধের কারণে যাত্রীও তেমন নেই, যার কারণে পুরোদিনে ৩০০ টাকা আয় করতে কষ্ট হয়ে যায়। আমাদের দৈনিক মালিককে দেয়ার যে টাকা সেটাও ওঠে না। এমন দিন আমরা চাই না। আমরা স্বাধীনভাবে দুইবেলা ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে চাই।

 

সিএনজিচালক সুরুজ বাঙালি বলেন, অবরোধে ভেঙে ও পুড়িয়ে ফেলার ভয়ে সিএনজি নিয়ে বের হই না।

 

জহির উদ্দিন নামে এক বাসচালক বলেন, অবরোধের কারণে বাস বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু এতে আমাদের আয় বন্ধ হয়ে যায়। জিনিসপত্রের দাম বেশি, আয়ও বন্ধ। এমন চলতে থাকলে পথে বসতে হবে। অপরদিকে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ও মূল্যায়ন পরীক্ষা। অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় শঙ্কিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও।

 

সামিহা লিয়ানা নামে ফেনী মডেল হাই স্কুলের এক শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিবছর ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা হলেও এবার নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন আবার অবরোধ শুরু হয়েছে। রাস্তায় হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কিনা এ নিয়ে চিন্তিত থাকতে হয়।

 

ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, অবরোধের নেতিবাচক প্রভাব ব্যবসায় পড়ছে। একদিকে জিনিসপত্রের দাম বেশি, অন্যদিকে অবরোধের কারণে অনেক ব্যবসায়ী দোকান খুলতে পারছেন না। এতে করে করোনাকালীন যে ক্ষতির শিকার ব্যবসায়ীরা হয়েছিলেন তা পুনরায় হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

 

গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রেখে ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি