logo
আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:৪৮
হাওর এলাকার পথে-হাটে বেচাকেনা হচ্ছে বিপন্ন পাখি
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

হাওর এলাকার পথে-হাটে বেচাকেনা হচ্ছে বিপন্ন পাখি

বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসা সরালি, বকসহ অন্যান্য পাখি

এখনো শীত খুব একটা নামেনি। হাওরে পরিযায়ী পাখিদের আসা শুরু হয়নি। তবু দলছুটের মতো যে পাখিরা আসছে, সেই চেনা-অচেনা, বিপন্ন এবং স্থানীয় আবাসিক পাখিরা শিকারির জালে ধরা পড়ছে। হাওরপারের পথে ও হাটে এই পাখিদের প্রকাশ্যে বেচাকেনা চলছে। মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের বিভিন্ন পথে ও হাটে এ রকম পাখি কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। আবার হাটেই পাখি জবাই করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন কোনো কোনো ক্রেতা।

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাট-হলদিগুল সড়ক ধরে যাওয়ার সময় হালকা বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছিল। ওই সড়কের কাউয়াদীঘি হাওরপারের চানপুর এলাকায় দেখা মিলল দুই ব্যক্তির। তারা হাওর থেকে কিছুক্ষণ আগে ফিরেছেন। একজনের হাতে জাল ও মাছের কাকরাইন (ঝুড়ি)। অন্যজনের হাতে বকের মতো দেখতে খয়েরি-ধূসর রঙের একটি বড় আকারের পাখি ঝুলছিল। গাড়ি থেকে নামতেই তারা জানতে চাইলেন, পাখি কিনব কি না। তিনি নিজে থেকেই দাম চাইলেন ১২০০ টাকা।

 

তিনি জানালেন, আগের রাতে মাছের জালে পাখিটি আটকা পড়েছে। সচরাচর এই পাখি দেখা যায় না। তাকে পাখিটি ছাড়া যায় কি না বললে, তিনি সরাসরি বলেন, ‘পাখি কেউ ছাড়ার জন্য ধরে নাকি, খাওয়ার জন্যই ধরে।’ এরপর তিনি সামনের দিকে হাঁটতে থাকেন।

 

কাউয়াদীঘি হাওরপারের কাশিমপুর বাজারের একদিকে কাউয়াদীঘি হাওর, অন্যদিকে কুশিয়ারা নদী। সকাল হলে বাজারটি মাছের ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে ওঠে। কুয়াশা যখন কিছুটা হালকা হয়, সূর্যের আলো ফোটে। হাটের বিভিন্ন দিক থেকে হাতে ছোট ছোট ডালায় মাছ নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। পুঁটি, ট্যাংরা, চ্যাং, কই, মাগুর নানারকম ছোট মাছ। নিলামে উঠছে মাছগুলো। সবচেয়ে বেশি টাকা নিলাম ডাকা লোক মাছ কিনে নেয়। এর মধ্যে একজনকে দেখা গেল এক হাতে একটি কালেম পাখি নিয়ে ঘুরছেন। তিনি মূলত ক্রেতা খুঁজছেন।

 

একসময় ৫০০ টাকায় একজনের কাছে বিক্রি করে তিনি সরে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আরও একজন এলেন। তার হাতে সাদা-কালো রঙের ছোট দুটি পাখি। এই পাখির একেকজন একেক নাম বলছেন। কালেম পাখির ক্রেতা এ দুটিও ৩০০ টাকায় কিনে নেন। তবে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে একধরনের লুকোচুরি আছে। তারা ভিড় এড়িয়ে এদিক-সেদিক সরে যান। এর কিছুক্ষণ পর আরও একজন এলেন, তার দুই হাতে চারটি পাখি। এর একটি সাদা বক, একটি সরালি। বাকি দুটি অচেনা। একটি একদম কুচকুচে কালো। ক্রেতা খুঁজতে খুঁজতে তিনি একসময় ভিড়ে হারিয়ে গেলেন।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এখন কাউয়াদীঘি হাওরে আর আগের মতো পাখি নেই। তারপরও মাঝে-মধ্যে জেলেদের পাতা জালে কিছু পাখি ধরা পড়ে। রাতের বেলা উড়তে গিয়ে জাল দেখতে পায় না। তখন জালে আটকে যায়। হাটে প্রকাশ্যে এই পাখি বেচাকেনা হয়। তবে প্রতিদিন হাটে পাখি ওঠে না।

 

পরিবেশকর্মী রাজন আহমদ বলেন, শীতে পাখির সংখ্যা বেশি দেখা যায়। শিকারিরা এই সময়ে তৎপর হয়ে ওঠে। হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন বিলে খাবারের সন্ধানে আসা পাখিরা শিকারির ফাঁদে আটকা পড়ে। হাওর-সংলগ্ন বাজারগুলোতে পাখিগুলো বিক্রি করে। পেশাদার-অপেশাদার শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে পাখিগুলো রক্ষা করা যাবে না।’

 

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী পরিযায়ীসহ কোনো পাখি হত্যা করলে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদন্ড, ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে বিধান আছে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদন্ড, ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে বিধান রয়েছে।

 

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার বলেন, ‘কাউয়াদীঘি হাওরপারের বিভিন্ন এলাকা, হাটবাজারে আমরা কয়েক দিনের মধ্যে সচেতনতামূলক সভা করব। কাশিমপুর বাজারেও গোপন অভিযানসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’

 

ভোরের আকাশ/নি