logo
আপডেট : ১৪ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:১০
কালীপূজা উপলক্ষে সপ্তাহ ব্যাপী কুন্ডুবাড়ী মেলা
মাদারীপুর প্রতিনিধি

কালীপূজা উপলক্ষে সপ্তাহ ব্যাপী কুন্ডুবাড়ী মেলা

মাদারীপুরের কুন্ডুবাড়ী মেলায় বসেছে বিভিন্ন পণ্যের পসরা

শ্রীশ্রী কালীপূজা ও দীপাবলি উপলক্ষে মাদারীপুরের কালকিনি পৌর এলাকার দক্ষিণ গোপালপুর গ্রামের কুন্ডুবাড়িতে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী কুন্ডুবাড়ী মেলা। প্রতি বছর শ্রীশ্রী কালীপূজা ও দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় এ মেলার। প্রায় আড়াইশ বছর ধরে দক্ষিণবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এই মেলাটি কুন্ডুবাড়ি মেলা নামে পরিচিত। প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কাঠের আসবাবপত্রের সমারোহ ঘটে এই মেলায়। এতে মাদারীপুরসহ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার লোকের ঢল নামে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালকিনি উপজেলার গোপালপুরের কুন্ডুবাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বর মাসে দীপাবলি ও শ্রীশ্রী কালীপূজা উপলক্ষে শ্রী দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডু সম্প্রদায়ের নামানুসারে মেলার নাম হয় কুন্ডবাড়ির মেলা। ওই সময় দীপাবলির পরের দিন এই অঞ্চলের বিভিন্ন মন্ডপের কালী প্রতিমা জড়ো করা হতো প্রতিযোগিতার জন্য।

 

এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সবদিক থেকে সেরা হতো তাদের পুরস্কার প্রদান করা হতো। সেই সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, কবিগান, জারি গান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হতো। কালের বিবর্তনে পালাগান, জারি গান, নৌকাবাইচ বন্ধ থাকলেও পুতুল নাচ ও নাগর দোলার আয়োজন এখনো আছে। বংশ পরম্পরায় প্রতি বছর এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মেলা বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এই মেলা বিখ্যাত।

 

মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও ঢাকা, ফরিদপুর, বগুড়া, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। কালীপূজার এক সপ্তাহ আগে থেকেই আসবাবপত্রের ব্যবসায়ীরা আসা শুরু করে। প্রতি বছরের তুলনায় এবার কাঠের আসবাবপত্রের চাহিদা বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

মেলায় বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে আসা মো. শামীম আহম্মেদ জানান, আমার বাবা ও দাদা এই মেলায় আসবাবপত্র বিক্রি করার জন্য এসেছেন। আমিও অনেক বছর যাবৎ এ মেলায় কাঠের আসবাবপত্র নিয়ে আসি। মেলায় আসবাবপত্র বেশি বিক্রি হয়। ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে বিভিন্ন ডিজাইনের আসবাবপত্র মেলায় নিয়ে এসেছি। অনেক কাঠের দোকান বসেছে মেলায়।

 

মেলায় বরিশাল থেকে ঘুরতে আসা বৃষ্টি আক্তার বলেন, দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ এ মেলা দেখার জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে মেলায় এসেছি। এত বড় মেলা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। সব ধরনের জিনিসপত্র মেলায় রয়েছে। কাঠের নানা ডিজাইনের আসবাবপত্র বেশি উঠেছে। মেলা দেখে খুব ভালো লাগছে।

 

পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাসুদেব কুন্ড বলেন, দীপাবলি ও শ্রীশ্রী কালীপূজা উপলক্ষে আমাদের পূর্বপুরুষরা ২৩১ বছর পূর্ব থেকে ৪ একর জমির ওপর এই মেলার আয়োজন করেন। পরে ধীরে ধীরে এই মেলা বিস্তৃতি হয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পরে। প্রতি বছর এই মোলায় কমপক্ষে ৭-৮ কোটি টাকার বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়। কালীপূজার ২ থেকে ৩ দিন আগে থেকে এই মেলা শুরু হয়ে চলবে সপ্তাহব্যাপী।

 

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম জানান, প্রতিবারের মতো এবারো যথারীতি আমাদের ৩ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এবং সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশি তৎপরতা থাকবে।

 

ভোরের আকাশ/নি