মুন্সীগঞ্জের সব বিলজুড়ে এখন বিপুল পরিমাণ আমন ধান। বর্ষার শুরুতে এই আমন ধান রোপণ করেছিলেন কৃষকেরা। এখন বর্ষার পানি জমি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ধানগুলোও পাকতে শুরু করছে। তাই এই ধানগুলো ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক।
সরেজমিনে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার বিল ঘুরে দেখা গেছে, খেত ভরা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় মহাখুশি কৃষক। কৃষকের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণিরাও।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পাঁচগাঁও বিলে কথা হয় কৃষক আমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর প্রায় আট একর জমিতে আমি আমন ধান রোপণ করেছিলাম। আমার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। একই উপজেলার হাসাইল মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ওই ঘাটি দিয়ে বিপুল পরিমাণে ধান নিজ বাড়িতে তুলছেন কৃষক। জামালপুর হতে কাজ করতে আসা শ্রমিক নোমান বলেন, এ বছর ধান ভালো হয়েছে। আমরা সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৬০০ টাকা করে শ্রম বিক্রি করছি।
সিরাজদিখান উপজেলার বয়রাগাদি গ্রামের কৃষক ইয়াছিন বলেন, এ বছর ১৫০ শতাংশ জমিতে আমন ধান রোপণ করেছিলাম। এতে যে ফলন হয়েছে আমার পরিবারের সারাবছর এ ধানে সংসার ভালো করেই কাটবে।
সিরাজদিখানে উপজেলা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সিরাজদিখান উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু ২ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ৬৮০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। সিরাজদিখান উপজেলাজুড়ে দেখা গেছে, ধানের সোনালি ছড়ায় ভরে গেছে ফসলের মাঠ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আর চালের দাম বেশি হওয়ায় ধানের দামও বেশি আশা করছেন কৃষক। ইছাপুরা গ্রামে ভবন দাস বলেন, এবার আবহাওয়া অনুক‚লে ছিল। এ ছাড়া পোকামাকড়ের আক্রমণও হয়নি। যে কারণে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চন্দনধূল গ্রামের কৃষক মো. জুলহাস শেখ এবার আনুমানিক ৭০ শতাংশ জমিতে ধানের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমার ধান অনেক ভালো হয়েছে। চালের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে যদি ধানের দামও মেলে তবে আগামী মৌসুমে আরও বেশি জমিতে ধান চাষ করব।
সিরাজদিখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, উপজেলাজুড়েই আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষক উৎসবমুখর পরিবেশে নিজ নিজ জমি থেকে ধান কেটে বাড়ি নিচ্ছেন। রোপা আমনের ফলন ভালো হলেও বোনা আমনের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বর্ষা মৌসুমে অনেক জমিতে পানি না থাকাকে দায়ী করেন তিনি। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, রোপা আমনের ফলন খুব ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে কৃষক হেক্টর প্রতি ৪ দশমিক ৫ টন ধান পাবেন।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, এ বছর রোপা এবং বোপা উভয় প্রকার আমনের ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ায় ফলন খুব ভালো হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে বর্ষা মৌসুমে পানি কম হওয়ায় দিন দিন রোপা আমন ধানের আবাদ বাড়ছে।
এ বছর রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৮৪ হেক্টের, আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৭১৫ হেক্টর। বোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর, আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ৮৫৪ হেক্টর।
ভোরের আকাশ/নি