ডায়াবেটিকস বা বহুমূত্র- এই রোগে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ আক্রান্ত। বিশ্বে প্রতি ৭-১০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে । জাতীয় জনসংখ্যা গবেষনা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান তাদের জরিপে দেখেছেন, বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০৪৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ২ কোটি ২৩ লাখে পৌছে যেতে পারে। এখনো ৪০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস পরীক্ষাই করাননি ।
দেশের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তবে নিয়ম মেনে চললে প্রায় ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য !
ডায়াবেটিস মূলত দুইটি টাইপের হয়। টাইপ-১ ও টাইপ-২। আমাদেশ দেশে টাইপ-২ এর রোগী বেশি দেখা যায়। টাইপ-২ এর শ্রেনীভূক্ত যারা চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিক ভাবে মেনে চললেই নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কিন্তু যারা টাইপ-১ এ আছেন তাদের পুরোপুরি ঔষধ ও ইনসুলিনের উপর নির্ভর থাকতে হয়। কারণ এ ধরনের রোগীর শরীরে একেবারেই ইনসুলিন তৈরি হয় না ।
টাইপ-২ এর রোগীদের জন্য কিছু পরামর্শ দেয়া হলো। এই নিয়ম মেনে চললে, সব খাবার খেয়েও ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে। যেমন :
অনেকের মধ্যেই একটা ভূল ধারণা প্রচলিত আছে জীবন থেকে চিনি নামক বিষকে ঝেড়ে ফেলে দিলেই হয়তো ডায়াবেটিস থেকে পিছু ছাড়াতে পারবে। কিন্তু এই তথ্যের সত্যতা কতটুকু !
অনেকেই মিষ্টি খাবার খেতে দারুণ পছন্দ করেন কিন্তু রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় জীবন থেকে সব মিষ্টিই বাদ দিতে হয়েছে। নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলেছেন সুগার ফ্রি ডায়েট চার্টে । কিন্তু তারপর ও ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত। তবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে শুধু চিনি খাওয়া বাদ দিলেই ডায়াবেটিস থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে না, আনা জরুরী জীবন যাপনে বেশ কিছু পরিবর্তন।
আরও পড়ুন : বুকে তীব্র ব্যথা ! মনে হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে? জেনে নিন এ সম্পর্কে বিস্তারিত!
পাল্টে দিন জীবনধারার গতি, ডায়াবেটিস অনেকাংশেই বংশগত কারণে হয় । যে পরিবারে দাদা-দাদী, নানা-নানী, বাবা-মায়ের ডায়াবেটিস আছে তাদের বংশধরদেরও ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি থাকে। তাই সঠিক খাদ্যাভাস গড়ে তুলতে হবে। পরিমিত খাবার গ্রহণ করা ও রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এমন খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে । দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত শরীর চর্চা করা । আপনি যদি শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকেন তাহলে ইনসুলিন হরমোনের নিঃস্বরণ এমনিই ঘটবে ও ভারসাম্য বজায় রাখবে ।
মানসিক অবসাদ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা, দেখা যায় আমরা সবাই কোন না কোন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকি । এটা করা যাবে না, কারণ মানসিক চাপ বেশি হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় । মানসিক অবসাদ দূর করতে যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন করতে পারেন ।
রক্তে চিনির মাত্রার উপর নজর রাখতে হবে, সেজন্য নিয়ম করে মাঝে মাঝেই সুগার টেষ্ট করিয়ে নিতে পারেন। যাতে করে ডায়াবেটিস হয়েছে কি না তার দিকে নজর রাখা ও সচেতন থাকতে পারেন ।
আপনি যদি দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন বা পর্যাপ্ত ঘুম হয় না তাহলে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন নিঃস্বরণ করতে পারবে না এবং গ্লুকোজ বেড়ে গিয়ে রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করবে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন যদি ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয় তাহলে সবার আগে যে বদ অভ্যাসকে ঝেরে ফেলতে হবে- তা হচ্ছে ধূমপান ও মাদক সেবন পরিহার করা । কারণ ধূমপান, মদ্যপান, মাদক সেবন ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধির সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত করে তোলে।
ভোরের আকাশ/অ