logo
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:২০
জোটের নির্বাচন কোন পথে?
শাহীন রহমান

জোটের নির্বাচন কোন পথে?

শাহীন রহমান: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলো এককভাবে অংশ নেবে নাকি জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে তা আজকের মধ্যেই ইসিকে অবহিত করতে হবে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন চাইলে কয়েকটি দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারে। সেক্ষেত্রে কোন দলের প্রতীক ব্যবহার করা হবে তা ইসিকে জানানোর বিধান রয়েছে। তবে তফসিল হলেও এখন পর্যন্ত কোনো দল জোটের কথা প্রকাশ্যে বলেনি। যদিও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু জোটগত নির্বাচনের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।

 

অন্যদিকে সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কিনা বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেনি। বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের মাঠে রয়েছে। নভেম্বরের শুরু থেকেই তারা অবরোধ হরতালসহ লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে আসছে। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে নির্বাচন বয়কট করার হুমকি রয়েছে। ফলে নির্বাচনের তফসিল হলেও এবার জোটগত নির্বাচনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত আলোচনার বাইরে রয়েছে।

 

গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেয়ার হিড়িক শুরু হয়। ওই নির্বাচনে শরীকদলগুলোকে নিয়ে মহাজোটের ব্যানারে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটে থাকলেও গণফোরামসহ কয়েকটি দল সঙ্গে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জোটবদ্ধভাবে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। পাশাপাশি অন্য দলগুলোও জোট করে নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্তু এবার দলগুলোর প্রকাশ্যে সেই তৎপরতা নেই বললেই চলে।

 

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চিয়তা থাকায় দলগুলোর এখনও দ্বিধাদ্ব›দ্ব রয়েছে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ভোটের প্রস্তুতি শুরু হলেও বিএনপি সমর্থিত দলগুলো নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। ফলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট করেনি। আবার কিছু রাজনৈতিক দল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পড় মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করলে অন্য দলগুলোর এখন পর্যন্ত নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

 

তবে তফসিল ঘোষণার পর ইসির নিবন্ধিত ৪৪ রাজনৈদিক দলের মধ্যে বিএনপিসহ ১৭টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখান করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগসহ ১৫টি দল স্বাগত জানিয়েছে তফসিল ঘোষণাকে। বাকি ১২টি দল তফসিলের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখন স্পষ্ট করেনি। যেসব দল তফসিল প্রত্যাখান করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), ইসলামী ঐক্য জোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), গণফোরাম ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।

 

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটও আন্দোলন করছে। এ জোটের শরিক বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। বাম জোটের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (বাংলাদেশ জাসদ) প্রত্যাখ্যান করেছে। তফসিল ঘোষণার বিরুদ্ধে দুই দিন ধরে ঢাকায় বিক্ষোভ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

 

তফসিল ঘোষণার পরপরই এটিকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আনন্দমিছিল করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ভোটের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকেরা স্বাগত জানিয়েছে তফসিলকে।

 

তফসিলকে স্বাগত জানানো দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। দলটি তফসিলকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেনি বা স্বাগতও জানায়নি।

 

জানা গেছে বহুদিন অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকার পর গত সেপ্টেস্ব মাসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের তৎপরতা শুরু হয়েছে। জানা গেছে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে ১৪ দলীয় জোট আগের মতোই জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।

 

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর ইসি জানিয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে অভিন্ন প্রতীকে ভোট করতে চাইলে আজ শনিবারের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে হবে। আইন অনুযায়ি কোনো দল বা জোট এ বিষয়ে আবেদন না করলে জোটের প্রার্থীকে প্রধান দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে তবে। তবে কোনো দল বা জোট যদি সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানায়, তখন কমিশনকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী করবে।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানান নিবন্ধিত ৪৪টি দলের প্রতি এ আহব্বান জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর ২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল মিলে জোট গঠন করা হলে, তার মধ্যে থেকে যেকোনো একটি দলের প্রতীক জোটভুক্ত দলগুলোর প্রার্থীদের বরাদ্দ করা যাবে। এমন প্রতীক পেতে হলে জোটকে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবর দরখাস্ত দাখিলের বিধান রয়েছে।

 

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন ইসিকে অবহিত করা না হলে কোনো জোটের মনোনীত প্রার্থী, ওই জোটের প্রধান দলের প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ পাবেন না। তারা বলছেন রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেবার জন্য জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে এ বিধান রাখা হয়েছে। সেজন্যই কমিশনের জানা দরকার কোন দলকে কী প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।

 

তারা বলেন, কোনো প্রার্থী যদি কোনো দলের হয়, তাহলে সেই দলের জন্য একটা প্রতীক বরাদ্দ আছে। কোনো দলের মনোনয়ন না পেলে সে স্বতন্ত্র প্রতীক পাবে। কিন্তু যখন কয়েকটি দল মিলে জোট করে, তখন একটি নির্বাচনী এলাকায় একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। তখন জোটই পছন্দ করবে ওই প্রার্থীকে কোনো প্রতীক দেবে। সেটা নির্বাচন কমিশনকে জানানোর বিধান আছে আইনে।

 

ভোরের আকাশ/নি